বরগুনার পাথরঘাটায় এক নারী রোগীর স্বজনের দায়ের করা মামলায় ডাক্তার বশির আহমেদের জামিন। একই মামলায় ক্লিনিকের মালিক মিলন মেম্বর এর জামিন না-মঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
উল্লেখ্য, পাথরঘাটা হাসপাতাল রোডে অবস্থিত শাপলা ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে সুরমা বেগম (৩০) নামক এক নারীকে ডাক্তার বশির আহমেদ এবং ঢাকা থেকে আসা অপর আরও একজন ডাক্তার তরুন কুমার সিকদার মিলে দুবার অপারেশন করলে সে অসুস্থ হয়ে পরে। একদিনের ব্যবধানে দুই বার কাটা-ছেঁড়ার ফলে ওই নারী মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং স্বজনের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়।
৫ নভেম্বর এ বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে রোগীর স্বজনসহ স্থানীয়রা নানাভাবে প্রতিবাদ শুরু করে।
রোগী পেটে ব্যাথার জন্য পাথরঘাটা শাপলা ক্লিনিকে ভর্তি করলে ডাক্তার বশির আহম্মেদের পরীক্ষা নীরিক্ষায় এ্যাপেনডিক্স ধরা পরে। এর জন্য অপারেশন করতে নিয়ে গেলে অপারেশনের সময় পেটের মধ্যে জরায়ু টিউমার ধরা পরে বলে তিনি জানান। এঅবস্থায় তিনি অপারেশন ছাড়াই ওই রোগীর পেট সেলাই করে রেখে দেন বলে অভিযোগ ওঠে।
এরপরে অপর এক ডাক্তার তরুন কুমার সিকদার কোন রকম পরীক্ষা নিরিক্ষা না করে অপারেশন করতে গেলে একই অবস্থা দেখে অপারেশন না করে তিনিও পেট সেলাই করে রেখে দেন বলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানায়। এ অবস্থায় রোগী অসুস্থ হয়ে পরলে তার পরিবার ও স্বজনরা হাসপাতালের মধ্যে চিৎকার চেঁচামেচিসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন।
পরবর্তীতে থানা পুলিশকে খবর দিলে এসআই বেলায়েত হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। শনিবার রাতে ডাক্তার বশির ও শাপলা ক্লিনিক এর মালিক মিলনকে গ্রেফতার করে থানা হেফাজতে নেয়া হয়।
রোগীর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর রবিবার বেলা ১১ টায় পুলিশ তাদেরকে আদালতে হাজির করে । এ সময় পাথরঘাটা সহকারী জজ আদালতের বিচারক ডাক্তার বশির আহমেদের জামিন মঞ্জুর করলেও ক্লিনিক মালিক মিলনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
অভিযুক্ত ডাক্তার বশির আহমেদ সর্বশেষ পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচ এর দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় স্বেচ্ছায় অবসরে যান।
পরবর্তীতে তিনি পাথরঘাটা, মঠবাড়িয়ার সহ বিভিন্ন ক্লিনিকে পার্ট টাইম হিসেবে চিকিৎসা করতে থাকেন ।
উপজেলার সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে ডা. বশিরকে আদালত জামিন দেন বলে আদালত সূত্রে জানা যায়।
এদিকে সাধারণ রোগীদের বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল এ নিয়ে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। তাই পাথরঘাটা উপজেলা সাধারণ রোগী ও জনগণ, ডা. বশিরের পক্ষে আদালত প্রাঙ্গনে অবস্থান করেন। এ ছাড়াও পাথরঘাটা উপজেলা ক্লিনিক মালিক সমিতি উপজেলার সব ক্লিনিক বন্ধ রেখে ডা. বশিরকে আটক ও মামলার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ডাক দেন মানববন্ধনের।
পাথরঘাটা উপজেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সভাপতি মতিউর রহমান অভিযোগ করে বলেন, পাথরঘাটা শাপলা ক্লিনিক এর মালিক মিলন মেম্বর চক্রান্ত করে ডা. বশিরকে মামলা দিয়েছে। তাই মিলনের বিচারসহ তার ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়ার দাবি করছি।
এ বিষয়ে ডা. বশির আহমেদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি রুগীর অবস্থা দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করেছি কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রুগীকে এই রোগের চিকিৎসা দিতে পারবে বলে সেখানে রেখে দিয়েছে। এখানে আমার কোন অপরাধ ছিলো না বলেই বিজ্ঞ আদালত আমার জামিন মঞ্জুর করেছেন।