আওরঙ্গজেব কামাল :
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ডুমুরিয়া ও ফুলতলা
এই দুই উপজেলা মিলে খুলনা-৫ আসন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকেই এ আসনটি
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে। এক কথায় আওয়ামী লীগের দুর্গ বা ভোট ব্যাংক
হিসেবে পরিচিত। মহান জাতীয় সংসদের ১২তম নির্বাচনী আসর। সবকিছু ঠিকঠাক
থাকলে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মহান জাতীয় সংসদের ১০৩ নং
সংসদীয় অঞ্চল হল ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা। সংসদীয় এ আসনে এবার মোট ভোটর
সংখ্যা হল ৩ লক্ষ ৮২ হাজার ৯’শ ৯ জন। তারমধ্যে ডুমুরিয়ার ভোটার ২ লক্ষ ৬৯
হাজার ১’শ ২৬ জন এবং ফুলতলায় ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৭’শ ৮৩ জন। এ আসনে সকল
জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও
আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন দুবারের সফল মন্ত্রী ফুলতলা
ডুমুরিয়া গড়ার রূপকার নারায়ণ চন্দ্র চন্দ্র। গতকাল রবিবার (২৬
নভেম্বর)বিকেলে এই তালিকায় খুলনা-৫ ডুমুরিয়া- ফুলতলা আসন থেকে সাবেক
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপিকে নৌকার মাঝি
হিসেবে ঘোষণা করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ’র মনোনয়ন কমিটি। খুলনা-৫ আসন
থেকে সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ আওয়ামী লীগের
মনোনয়ন পাওয়ায় ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলায় আনন্দ মিছিল অনুষ্ঠিত
হয়েছে।অধিক রাত্র পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ,
স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগি সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়।এসময়ে
নৌকা মার্কার স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় ভান্ডারপাড়া, রংপুর,
মাগুরখালী, শোভনা, আটলিয়া, ডুমুরিয়া ও ফুলতলা সদরসহ দুই উপজেলার বিভিন্ন
এলাকা। রবিবার বিকালে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের খুলনা-৫ আসনে
নারায়ন চন্দ্র চন্দের নাম ঘোষণা করেন। প্রসঙ্গত, খুলনা-৫ আসন থেকে
আ’লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। এবার নির্বাচিত হলে
৫ম বারের মত সংসদ সদস্য হবেন তিনি। তিনি বিগত ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আমলে সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী
সালাউদ্দিন ইউসুফ এমপির মৃত্যুতে শূন্য হওয়া খুলনা-৫ আসনের উপনির্বাচনে।
২০০০ সালে ২০ ডিসেম্বরের ভোটে জিতলেও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি
হেরে যান। আর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে আসনটি আবার নিজের
করে নেন নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে খুলনা-৫ আসন থেকে
বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।শেখ
হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ২ জানুয়ারি
২০১৮ পর্যন্ত মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও ২ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে
৭ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ
২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি খুলনা-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ
আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।গতকাল রবিবার ২৬
নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ’র মনোনয়ন বোর্ড কতৃক
নারায়ণ চন্দ্র চন্দের নাম ঘোষণা করায় তার সমর্থকেরা উচ্ছাস প্রকাশ করে
ডুমুরিয়া-ফুলতলায় খন্ড খন্ড আনন্দ মিছিল করে।এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমে মহান সৃষ্টি কর্তার প্রতি শুকরিয়া আদায় করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন
অনেকেই। আবার কোথাও কোথাও। ঢাকা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে সাবেক মন্ত্রী
নারায়ণ চন্দ্র চন্দ্ এর জন্য দোয়া চাওয়া হয় ফেসবুকে । খোজ নিয়ে যাওয়া
যায়,এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে নতুন মুখ যেমন
এসেছেন, তেমনি বাদও পড়েছেন মন্ত্রী, উপ- মন্ত্রীসহ বিতর্কিত এমপিরা। তবে
জনগণের ভোটে বিজয়ী হতে পারবেন এমন প্রার্থীদের কাউকেই বাদ দেওয়া হয়নি
বলে জানিয়েছে দলের বিভিন্ন সূত্র। গত বৃহস্পতিবার সংসদীয় মনোনয়ন
বোর্ডের সভা শুরু হয়। সেদিন খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১০৮টি আসনে
প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। এ বিষয়ে তিনি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা
জানিয়ে বলেন,আমাকে মনোনয়ন দেওয়ায় জননেত্রী শেখ হাসিনা সহ মনোনয়ন বেডের
সকল কে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। তিনি গর্ব করে বলেন শেখ
হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের রুপকার। তার হাত ধরে বাংলাদেশ আরো অনেক দুর
এগিয়ে যাবে। যে দেশের স্বপ্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
দেখেছিলেন সেই স্বপ্নের ও কল্পনার দেশ আজ বাস্তব সোনার বাংলাদেশে পরিণত
হয়েছে। তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবার স্বপ্নের ও
কল্পনার দেশকে আজ বাস্তব পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। যেমনটা তিনি ভাবছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী সাহস, বুদ্ধি ও চিন্তাচেতনাকে কাজে
লাগিয়ে বাঙালি জাতিকে উপহার দিয়েছেন তার বাবার কল্পিত সোনার বাংলাদেশ।
একসময় দেশি/বিদেশি কিছু কুলাঙ্গার বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে যে উপহাস
বা তিরস্কার করেছিলেন তাদের মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশ
হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে ডিজিটাল
বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছিলেন, এখন আবার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট
বাংলাদেশ হতে চলেছে, যা নিয়ে সারাবিশ্ব আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশ
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। তাই আমি
সকলের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থানা করছি। যাতে দেশের অসমাপ্ত কাজ
গুলি শেস করতে পারি। নারায়ন চন্দ্র চন্দের জন্ম ১৯৪৫ সালের ১২ মার্চ।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার উলা গ্রামের কালিপদ চন্দের মেঝ ছেলে তিনি।
তার মায়ের নাম রেনুকা বালা চন্দ। স্ত্রী উষা রানী চন্দও পেশায় একজন
শিক্ষক। ৪ সন্তানের জনক নারায়ন চন্দের ৩ ছেলে ও ১ মেয়ে। নারায়ন চন্দ্র
চন্দ ১৯৬১ সালে ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৬৩
সালে দৌলতপুর বিএল কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৬৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং ১৯৬৭ সালে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
এরপর পর তিনি ডুমুরিয়ার সাহস নোয়াকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক
হিসেবে কর্ম জীবন শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের ৭ মে নারায়ন চন্দ্র চন্দ খুলনার
ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন।
ওই বিদ্যালয় থেকেই তিনি মেট্রিক পাশ করেছিলেন। তার প্রচেষ্টায় ১৯৭৪ সালে
ডুমুরিয়া স্কুলে প্রথম এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র চালু হয়। এরআগে এই এলাকার
শিক্ষার্থীদেরকে খুলনা শহরে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হতো। শিক্ষক হিসেবে
যোগদানের পর পরই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন থানা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। তিনি
সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহন করেন। ২০০৫
সালের ১১ মার্চ শিক্ষকতা পেশা থেকে তিনি অবসর গ্রহন করেন।
ছাত্র জীবন শেষ করে ১৯৬৭ সালে নারায়ন চন্দ্র চন্দ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে
যুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে তিনি থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে
দায়িত্ব পান। ১৯৮৪ সালে তিনি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন এবং
১৯৯৫ সালের সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তিনি ২০০৩ সালে গঠিত উপজেলা
কমিটিতেও সভাপতি নির্বাচিত হন। সেই থেকে আজো থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির
দায়িত্ব পালন করে চলেছেন নারায়ন চন্দ্র চন্দ। বাংলাদেশে প্রথম অনুষ্ঠিত
ইউপি নির্বাচনে তিনি ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ পদে তিনি ৬ বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সেই
সময়কালের সরকারের প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাউদ্দিন ইউসুফের মৃত্যুর পর
২০০০ সালের ২০ ডিসেম্বর ওই আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে নারায়ন চন্দ্র চন্দ
প্রথমবারের মতো ডুমুরিয়া-ফুলতলা আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।২০০১
সালের নির্বাচনে তিনি চার দলীয় জোটের প্রার্থী গোলাম পরোয়ারের কাছে
পরাজিত হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি পুনরায় একই আসন থেকে
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয়, পরিশ্রমি
হিসেবে পরিচিত। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর দশম জাতীয় নির্বাচনে তিনি বিনা
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এরপর তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ
মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর এবং পরবর্তিতে তিনি ওই মন্ত্রণালয়ের
পূর্নমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য,
মৎস্য, কৃষি, যোগাযোগ, বিদ্যুৎসহ আইন শৃঙ্খলা উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছেন।
লেখক ও গবেষক
|