আওরঙ্গজেব কামাল :
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দ
পেয়েই খুলনা আসনে নির্বাচনের আমেজ শুরু হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের
প্রচারে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের কাছে ছুটতে শুরু করেছেন
নির্বাচনে অংশ নেয়া বিভিন্ন দলের প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকরা। আগামী সংসদ
নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থীদের প্রচারণা শুরু হয়েছে । দলীয় এবং
ব্যক্তিগত প্রতীক পাওয়ার পরই প্রার্থীরা প্রচারণায় নেমে পড়েন। তারা
ফুলতলা ও ডুমুরিয়া গড়ার উন্নয়নের বার্তা নিয়ে মাঠে কাজ করছেন। অনেকে
নির্বাচনি পোস্টার আগেই ছেপে রেখেছিলেন, গতকাল নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন
পাড়া-মহল্লায় তা টানানো শুরু হয়েছে। এবার এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত
প্রার্থী সাবেক দুবারের সফল মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ। তিনি নৌকা
প্রতীক নিয়ে লড়ছেন । এ বিষয়ে তার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রী
শিক্ষাবিদ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি বলেন, জননেত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু
কন্যা জননেত্রী আমাকে অত্যন্ত পছন্দ করেন। তাছাড়া আমার নির্বাচনী এলাকার
জনগনসহ দক্ষিণাঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় আজকের এই অর্জন।
জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত মানুষের জন্যই কাজ করতে চাই। জাতির জনক
বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর আস্থা ও
বিশ্বাস রেখে আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। আজ আমি দলীয় প্রতীক বরাদ্দ
পেলাম। আমার মার্কা নৌকা। আমি বিশ্বাস করি এই নৌকা মার্কা সকলের পরিচিত
মার্কা। শুধু তাই নয়, নৌকা হলো উন্নয়নের মার্কা, নৌকা হলো স্বাধীনতার
মার্কা। নৌকা জাতির জনকের মার্কা। নৌকা হল জন নেত্রী শেখ হাসিনার। যারা
শেখ হাসিনাকে ভালো বাসে যারা নৌকা কে ভালো বাসে তারা নৌকায় অবশ্যই ভোট
দেবে। তিনি এ সময় আরো বলেন,নৌকা উন্নয়নের প্রতীক , তাই মানুষ নৌকায় ভোট
দিবেন। আমি খুবই খুশি আমার নির্বাচনী আসনে অনেকগুলো প্রার্থী আছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাও বেশি। এতে অবশ্যই নির্বাচনটা উৎসবমুখর হয়ে
উঠবে। দলীয় বিদ্রোহী যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তারাও দলের মনোনয়ন
চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা মনোনয়ন না পেয়ে নৌকার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে
স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তারা কিন্তু দলের বড় বড় পদধারী নেতাও। আমি
মনে করি বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র বা ডামি প্রার্থী যাই বলি না কেন, কোনো
দিকে মানুষ যাবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষ উন্নয়নের
মার্কা হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর মার্কা হিসেবে নৌকাকেই বেছে নিবেন। এটা আমার
বিশ্বাস। এই বিষয়ে তিনি আরোও বলেন, কেউ বলতে পারবে না আমি অন্যায়ভাবে
অর্থ উপার্জন করেছি কিংবা কারও জমি দখল করেছি। আমি মনে করি,
ডুমুরিয়া-ফুলতলার মানুষ আওয়ামী লীগকে ভালোবাসে, আমাকে ভালোবাসে। এলাকায়
ব্যাপক উন্নয়নকাজ হয়েছে। মানুষ তার সুফল পাচ্ছে। তাই আমাকেই আবার চাইবে।
আমৃত্যু কাজ করতে চাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে জননেত্রী শেখ হাসিনার
নির্দেশনায়। তিনি দণিাঞ্চলের চিংড়ি শিল্পসহ মৎস্য সেক্টরের উন্নয়নে কাজ
করারও অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন। চাই সবার সহযোগিতা। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা
বলে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে এই আসনে আওয়ামী লীগের সাথে
কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না। সংসদীয় এ আসনে এবার মোট ভোটর সংখ্যা হল ৩
লক্ষ ৮২ হাজার ৯’শ ৯ জন। তারমধ্যে ডুমুরিয়ার ভোটার ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ১’শ
২৬ জন এবং ফুলতলায় ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৭’শ ৮৩ জন। এ আসনে সকল জল্পনা কল্পনার
অবসান ঘটিয়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের
চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন দুবারের সফল মন্ত্রী ফুলতলা ডুমুরিয়া গড়ার
রূপকার নারায়ণ চন্দ্র চন্দ্র। তিনি খুলনায় দীর্ঘ বছর ১৮ পর ২০১৮ সালে
একজন পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী পান। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের
দায়িত্বপালনকারী সফল প্রতিমন্ত্রী শিক্ষাবিদ নারায়ন চন্দ্র চন্দ মন্ত্রী
হিসেবে শপথ নেয়। এবং পূর্ণ মিয়াদ পর্যন্ত সফল ভাবে দায়ীত্ব পালন করেন।
অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন ইউসুফ ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগের সরকার আমলে
স্বাস্থ্য মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০০ সালের সেপ্টেম্বও
দপ্তরবিহীন মন্ত্রী থাকা অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। এরপর আর কেউ খুলনায়
পূর্নমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করার সুযোগ পাননি। নারায়ন চন্দ্র চন্দ
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার উলা গ্রামের বিখ্যাত চন্দ বংশের স্বর্গীয়
কালীপদ চন্দের মেঝ ছেলে। ১৯৪৫ সালের ১২ মার্চ তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর
মাতা ছিলেন স্বর্গীয়া রেণুকা বালা চন্দ। স্ত্রী ঊষা রানী চন্দ স্কুল শিক।
নারায়ন চন্দ্র চন্দ তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক। বড় ছেলে বিশ্বজিত চন্দ্র
চন্দ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক ও ডীন। মেঝ
ছেলে সত্যজিত চন্দ্র চন্দ ব্যবসায়ী ও ছোট ছেলে অভিজিত চন্দ্র চন্দ জেলা
পরিষদ সদস্য। একমাত্র জামাতা বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক। তাঁর বড়
ভাই দীন বন্ধু চন্দ্র চন্দ শোভনা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক
ছিলেন। তিনি শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি ১৯৬৭ সালে আওয়ামী লীগের রাজনীতির
সাথে যুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব
পান। ১৯৮৪ সালে তিনি ডুমুরিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি
নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে গঠিত কমিটিতেও তিনি সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সভাপতি
নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৫ সালেও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত
হন। ওই পদে এখনও তিনি সফলভাবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ
খুলনা জেলা শাখার সদস্য। এছাড়া আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রিয় কমিটির
সভাপতিও তিনি।এছাড়া বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে
ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে তিনি চেয়ারম্যান পদে
নির্বাচিত হন। ছয় বার তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তৎকালিন
স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও পরে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সালাহউদ্দিন ইউসুফের মৃত্যুর
পর ২০০০ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে নারায়ন চন্দ্র চন্দ
ডুমুরিয়া-ফুলতলা আসনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।২০০১ সালের অষ্টম
সংসদ নির্বাচনে তিনি চারদলীয় জোট প্রার্থীর নিকট পরাজিত হন। দলের জন্য
পরিশ্রমী, নিবেদিতপ্রাণ একজন কর্মী-সংগঠক চন্দ ২০০৮ সালের নবম সংসদ
নির্বাচনে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর মেয়াদকালে গত ৫ বছরে
ডুমুরিয়া ফুলতলার শিা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে তিনি
ব্যাপক কাজ করেছেন।দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়
তৃতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময়ে তিনি দায়িত্ব পান মৎস্য
ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। দায়িত্ব পেলেন এবার দায়িত্ব পেলেন
পূর্ন মন্ত্রী হিসেবে। উল্লেখ,খুলনা ৫ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩,৪৪,৪৮০।
পুরুষ ভোটার ১,৭১,৩০৫ নারী ভোটার ১,৭৩,১৭৫ জন।
|