স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সনদ যাচাই-বাছাই, মামলা ও আটক সহ জেলার নানাবিধ দায়িত্ব যে কর্মকর্তার উপর আর তিনি নিজেই ব্যবহার করেন মেয়াদোত্তীর্র্ণ ট্যাক্স টোকেন আর ফিটনেস সম্বলিত গাড়ি। এ অভিযোগ ঝিনাইদহ ট্রাফিক বিভাগের প্রধান ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মুহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে। তিনি এমন নিয়ম বহির্ভূত কাজ করায় শহর জুড়েই চলছে তোলপাড়, জনতার মাঝে সৃষ্টি হচ্ছে ক্ষোভ ও নিন্দা। জানা গেছে, ঝিনাইদহ ট্রাফিক বিভাগের প্রধান ট্রাফিক ইন্সপেক্টর সালাহ উদ্দিন বেশ কয়েকবছর ধরে মেরুন কালারের একটি প্রাইভেটকার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বিআরটিএ সনদে তার ব্যবহৃত গাড়িটির মালিকানা রয়েছে ইছাহক আলী খান পান্না নামে। ইছাহক আলীর ঠিকানা রয়েছে ঢাকার সোবহানবাগ সরকারি আবাসিক এলাকায়। গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ঢাকা মেট্রো-গ-১৩-১৮২০। তাছাড়া গাড়িটির ট্যাক্স টোকেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১১ সালের জুলাই মাসের ২৫ তারিখে আর ফিটনেস মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১২ সালের ফেব্রæয়ারি মাসের ১ তারিখে। অথচ ট্যাক্স টোকেন আর আর ফিটনেস মেয়াদ শেষ হওয়া গাড়ি নিয়ে শহর জুড়ে তিনি দিব্যি বাগিয়ে বেড়াচ্ছেন। প্রকাশ্যে ঝিনাইদহ শহরে এমন একটি গাড়ি চালিয়ে বেড়াচ্ছেন জেলা ট্রাফিক পুলিশের একজন শীর্ষকর্মকর্তা। এ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিরুপ মন্তব্য। এদিকে গাড়িটির ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলার বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের প্রেক্ষিতে অনলাইনে এ তথ্য প্রদান করেন। কিন্তু বিস্তারিত তথ্যের জন্য বিআরটিএ ঢাকা অফিসে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হয়। মন্তবিটি তিনি লেখেন ওই গাড়ির রেজিস্ট্রশন পেপারে নিজের সাক্ষরের উপর। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর সালাহ উদ্দিনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আপনি কী বলবেন আমি জানি। আপনি অফিস আসেন আমি আপনার সঙ্গে সামনাসামনি বসে কথা বলবো। আমি মিশনে গিয়েছিলাম ৪৬ লাখ টাকা পেয়েছি, তাই কয়েকলাখ টাকার গাড়ি ব্যবহার করতেই পারি। উচ্চস্বরে এমন কথা বলে লাইন কেটে দেন। দুটি হাত বদল করে এই গাড়িটি তিনি কোন একটি কোর্ট থেকে নিলামে নিয়েছিলেন বলেও সাংবাদিকদের জানান। তবে গাড়িটি কোর্টের নিলামে কেনার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি তিনি। ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের জন্য কোনো সরকারি গাড়ি বরাদ্দ নেই। ইচ্ছে করলে যে কেউ ব্যক্তিগতভাবে নিজ উদ্যোগে গাড়ি ব্যবহার করতে পারে। তবে আইন সবার জন্যই সমান। কেউ যদি বৈধ কাগজপত্রবিহীন গাড়ি ব্যবহার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করার অপরাধে মামলার সুযোগ আছে আর এই ধরনের অপরাধী সাধারণ মানুষ হোক আর ট্রাফিক ইন্সপেক্টরই হোক। বিআরটিএ ঝিনাইদহ সার্কেলের সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি.) এস এম মাহফুজুর রহমান জানান, আদালত থেকে নিলামের মাধ্যমে যে কেউ মোটরযান ক্রয় করতে পারে। সেসময় ওই গাড়িটির সড়কের চলাচলের মত ফিটনেস নাও থাকতে পারে। তাই সেই যানটি পরবর্তিতে সড়কে চালাতে হলে অবশ্যই ‘বিআরটিএ’ থেকে ফিটনেস সনদ নিতে হবে। এই ফিটনেস সনদ পরবর্তিতে বিআরটিএ এর নিজস্ব অনলাইনে লিপিবদ্ধ থাকবে। এ ছাড়া অন্য কোনো সুযোগ নেই।