দিনাজপুর প্রতিনিধি ঃ- দিনাজপুরের বীরগঞ্জে বাংলাদেশে এক মাত্র শকুন পরিচর্যা কেন্দ্রে ২০টি শকুন অবমুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। বিলুপ্ত প্রায় এই প্রাণীকে রক্ষায় সরকার নানা রকম পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় শকুনের কোনো বিকল্প নেই। পরিবেশবিদদের এমন মন্তব্যে সরকার বীরগঞ্জে বাংলাদেশের একমাত্র শকুন পরিচর্যা কেন্দ্র চালু করেছে। দিনাজপুর সহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে অসুস্থ ও আহত শকুন উদ্ধার করে শকুন রক্ষা এবং বংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই কেন্দ্রে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়। সুস্থ্য হলে আবার তাদেরকে অবমুক্ত করা হয় মুক্ত আকাশে। প্রকৃতির ঝাড়ুদার হিসেবে পরিচিত বিলুপ্ত প্রায় এই শকুন শীত মৌসুমে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে চলে আসে। দীর্ঘপথ পাড়ি দেয়া এসব শকুন অনেক সময়ই অসুস্থ হয়ে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নামে বাচার আশায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব শকুনের পরিণতি হতো মৃত্যু। দিনাজপুরে বীরগঞ্জ উপজেলার জাতীয় উদ্যান সিংড়া ফরেস্টে বাংলাদেশে একমাত্র শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টগেছে। প্রতি বছর প্রায় ২০/২৫ টি উদ্ধার করা শকুন পরিচর্যা করে অবমুক্ত করা হয়। পরিচর্যা কেন্দ্রের ২০টি শকুন আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অবমুক্ত করা হবে।
সিংড়া ফরেস্ট বনবিভাগের কর্মকর্তা (রেঞ্জার) হরিপদ দেবনাথ জানান, শীত মৌসুমে অন্যদেশ থেকে আসা ক্লান্ত ও অসুস্থ্য শকুনকে বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করে তাদেরকে এই পরিচর্যা কেন্দ্রে এনে রেখে সুস্থ্য করে তোলা হয়। পরিবেশের জন্য ভীষণ উপকারি এই পাখিগুলো এক নজর দেখতে সিংড়া জাতীয় উদ্যানে ভিড় জমায় শত শত দর্শনার্থী।
বীরগঞ্জ উপজেলায় জাতীয় উদ্যান সিংড়া ফরেস্টে গড়ে তোলা পরিচর্যা কেন্দ্রে শকুনের দেখা শুনার দ্বায়িত্বে থাকা বাঁশেরহাট ভেটেনারী কলেজের চিকিৎসক খাদিজা বেগম জানায়, পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা ২০ টি শুকুন অনেক ভালো রয়েছে। তাবে তাদের জন্য আরো ২/১টি খাঁচা দরকার। যেখানে নতুন শকুন এনে ৫/৭ দিন রেখে মুল খাঁচায় রাখা যেতে পারে। শকুনই একমাত্র প্রাণী, যা রোগাক্রান্ত মৃত প্রাণী খেয়ে হজম করতে পারে এবং অ্যানথ্রাক্স, যক্ষা, খুরারোগের সংক্রমণ থেকে অবশিষ্ট জীবকুলকে রক্ষা করে। কিন্তু বড় বড় গাছ, খাদ্যের অভাব ছাড়াও বাংলাদেশে ডাইক্লোফেনাকের যথেষ্ট ব্যবহারের কারণে শকুন বিলুপ্তির মুখে।
বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা জানান, পরিবেশ রক্ষায় শকুনের কোনো বিকল্প নেই। প্রতি বছর শীতে সাধারণ হিমালয়ী শকুন বা হিমালয়ান গৃধিনী বাংলাদেশে দীর্ঘ যাত্রাপথে খাবারের অভাব ও ক্লান্তির কারণে অনেক সময় অসু¯্য’ হয়ে পড়ে। প্রকৃতির ঝাড়ুদার এই শকুন দেখা মাত্রই আক্রমণ করে অসচেতন মানুষ। নির্যাতনের পাশাপাশি মানুষ এদের ধরে হত্যা করে। পৃথিবীতে দ্রæততম বিলুপ্ত হতে চলা প্রাণী শকুন। বাংলাদেশে শকুনের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। বিশ্ব থেকে ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে শকুন। তাই শকুন মাত্রই বিশ্বে মহাবিপন্ন।
শকুন উদ্ধার ও পরিচর্যা কেন্দ্রের মুখ্য গবেষক সারওয়ার আলম দিপু জানায়, ২০১৪ সাল হতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ২০১৬ সাল হতে বাংলাদেশ বন বিভাগ ও আইইউসিএন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে সিংড়া জাতীয় উদ্যানে এই কেন্দ্রটি চালু করা হয়। গত ২০১৬ সাল হতে ২০২১ সাল পযন্ত উদ্ধার করে আনা ১৪৯ টি শকুন কয়েক মাস নিবিড় পরিচর্যায় রেখে সুস্থ্য হলে আবারো প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হয়। ২০২২ সালে ৩২টি শকুন দেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেলেও ২০টি শকুন এ পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছে। বাকি ১২ টি শকুনকে সাময়িক চিকিৎসা শেষে অবমুক্ত করা হয়। ২০টি শকুন এ পরিচর্যা কেন্দ্র হতে আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে অবমুক্ত করা হবে।