বর্তমানে গণমাধ্যম বা সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতার সংকটে পড়েছে।সব সংবাদ মাধ্যমই গণমাধ্যম কিন্তু সব গণমাধ্যমই সংবাদ মাধ্যম নয়। এই সূত্র থেকে এটিও পরিষ্কাার যে, গণমাধ্যমে যারা কাজ করেন তারা সবাই গণমাধ্যমকর্মী কিন্তু সবাই সাংবাদিক । তারাই সাংবাদিক যারা সংবাদ মাধ্যমে কাজ করেন। যে সব গণমাধ্যম সাংবাদিকতার প্রতিষ্ঠিত নীতি-নৈতিকতা মেনে, পেশাদার সম্পাদকের নেতৃত্বে, অনেক পেশাদারি গেট কিপারের তত্ত্ববধানে পরিচালিত হয়সেটাকেই আমরা সংবাদ মাধ্যম বলব। গণমাধ্যম পরিচালিত হয় ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছায়, কোন গেট কিপারের বাধা এড়িয়ে। যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে সংবাদ মাধ্যম ও গণমাধ্যমের সুক্ষ ফারাকটি বুঝতে এই সাধারণ ধারণাটুকু মাথায় রাখতে হবে। বড় ক্যানভাসে হয়তো গণমাধ্যম নিয়েই কথা বলা যায়, কারণ মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলতে হবে দুটোকে মিলিয়েই। গণমাধ্যম বা সাংবাদিকতার বহুমুখী সংকট এখন চরমে। সাংবাদিকতার পন্ডিতজনেরা বলেন, এই সংকট এবং সংকট নিয়ে বিতর্কের শুরু সাংবাদিকতার জন্মলগ্ন থেকেই। এই উপমহাদেশে ১৭৮০ সন থেকে, যখন উপমহাদেশের প্রথম সংবাদপত্রটি প্রকাশিত হয়। সেটির শুরু ও শেষ হয় নানা বিতর্কের মধ্য দিয়েই। তাই আজ আলোচনার বিষয় বর্তমানে সাংবাদিকতা নিয়ে। এখন অধিকাংশ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অভিযোগ উঠছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে সাংবাদিক গুম খুন নির্যাতন মামলা ও হামলা বেড়েছে। এছাড়া সাংবাদিকরা এখন সাংবাদিকতা কে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যার একটি কে মূল ধারার গণমাধ্য অপরটিকে বলা হচ্ছে আন্ডার গ্রাউন্ড সাংবাদিকতা। যে কারণে সাংবাদিকদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি এখন চরমে। এক সাংবাদিক অফার সাংবাদিক বলে মেনে নিতে চায় না। সেক্ষেত্রে একটু সিনিয়র হলেই তো আর কথা নেই। অবশ্যই বর্তমানে উভয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এর মাঝে পুরো সংবাদ মাধ্যমই বিতর্কিত হচ্ছে। অনেকে সাংবাদিকদের সাংঘাতিক বলতেও ছাড়ছে না। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের উপর এখন যে কেউ আর আঙ্গুল তুলতে পিছপা হচ্ছে না। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ জাতির কাছে বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আমার প্রশ্ন এই ক্ষেত্রে দায়ী কে ? যেকোনো সমাজেই বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকে। এর মধ্যে কিছু চ্যালেঞ্জ দীর্ঘমেয়াদি। এ ক্ষেত্রে আমি প্রথাগত চ্যালেঞ্জগুলো রেখে নতুন চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েই আগে কথা বলতে চাই। এবং আমি মনে করি এই মুহূর্তে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সাংবাদিকদের জন্য কঠিন চ্যালেজ্ঞ। একদিকে রাজনৈতিক চাপ অপরদিকে ভিন্ন ভিন্ন পেশার লোক সাংবাদিকতার পেশায় ঢুকে গোটা সাংবাদিক সমাজ এখন হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ফলে সাংবাদিকতার ঝুকি ও বহুমুখি সমস্যা আরো অনেক গুন বেড়ে চলেছে। অপেশাদার সাংবাদিকদের কারনে বর্তমানে পেশাদার সাংবাদিকরা কঠোর পরিশ্রম করেও দুবেলা দুমুঠো অন্ন জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন । এ ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পেশা থেকে আশা নামধারী সাংবাদিকরা অনেক ভালো রয়েছে। তাদের গাড়ী বাড়ির অভাব নেই, কারন সাংবাদিকতাকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ্য পন্থায় নিজেদের পকেট ভারী করছে। তাদের প্রভাবে প্রকৃত সাংবাদিকরা এখন নাজেহাল হয়ে পড়েছে। তবে আমি বলবো,সাংবাদিকতা কি কুসুমাস্তীর্ণ পেশা? কখনও কি ছিল? সব সংকট বা চ্যালেঞ্জ পায়ে দলেই তো সাংবাদিকতা এগিয়েছে যুগ যুগ ধরে। সময় পাল্টেছে, সংকট বা চ্যালেঞ্জও ভিন্ন চেহারা নিয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকতা থেমেতো থাকেইনি বরং এগিয়েছে আরও নতুন উজ্জলতা নিয়ে।সাংবাদিকতা হচ্ছে সবচাইতে জীবন্তু ও আধুনিক পেশা। বুদ্ধিবৃত্তিক পেশা, সাংবাদিকতা কখনই মূর্খজনের পেশা নয়। কিছু মৌলিক কাঠামোই সাংবাদিকতাকে আধুনিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পেশার শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। সাংবাদিকতাকে দাঁড়াতে হয় এই মৌলিক ভিত্তির উপর। এই ভিত্তি ও সংকট সম্পর্কে জানা না থাকলে সাংবাদিকতা হয়তো করা যাবে, কিন্তু অবস্থানটি হয়ে যাবে টলটলায়মান।সাংবাদিকতার বুনিয়াদী ভিত হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা। বড় ক্যানভাসে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে মুক্ত গণমাধ্যম এবং চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার প্রসঙ্গটি। পৃথকভাবে তিনটি বিষয়ের কথা বলা হলেও, চূড়ান্ত বিচারে তিনটি মিলিয়েই মুক্ত গণমাধ্যমের চেহারাটা স্পষ্ট হয়। একটি সমাজে মত প্রকাশের স্বাধীনতাটি যদি নিশ্চিত না থাকে, সমাজটি যদি চিন্তা ও বিবেকের জন্য খোলা প্রান্তর অবারিত করতে না পারে, সেই সমাজে স্বাধীন বা মুক্তগণমাধ্যম বিকশিত হতে পারে না। সাহসী ও বুদ্ধিবৃত্তিক সাংবাদিকতার ভিত্ও দৃঢ় হয় না।গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলতে আমরা বুঝব যে, একটি গণমাধ্যম তার বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে, উপস্থাপনার ক্ষেত্রে এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে কি না। এই ‘স্বাধীন’ শব্দটি খুব জটিল। বর্তমানে দশে সাংবাদ মাধ্যম আসলে তেমন কোন স্বাধীনতা ভোগ করছে না। অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের ওপর ধারাবাহিক হামলার ঘটনায় ঘটেই চলেছে । কিন্ত এ বিষয়ে কোন ফল পাচ্ছেনা সাংবাদিকরা। শুধু সাংবাদিকদের নানা বিধ আইন তৈরীর মাধ্যমে গন্ডির মধ্যে ধরে রাখছে। বর্তমানে অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে সম্প্রতিকালে সাংবাদিকদের ওপর ধারাবাহিকভাবে হামলা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং ক্ষমতার অপব্যবহার, হামলা-মামলা ও বিচারহীনতার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চলমান প্রক্রিয়ার শঙ্কাজনক অপপ্রয়াসের অব্যাহত প্রবণতা। তাই আমি বলবো স্বাধীন এবং বহুমুখী প্রচার মাধ্যমকে সমর্থন করার জন্য সকলে এক যোগে কাজ করতে হবে।