ডেস্ক রিপোর্ট ● সিমা, পুরো নাম শাম্মি আক্তার সিমা। বয়স ৪০ পেরুলেও অন্য দশ নারীর চেয়ে সুন্দরী। স্কুলের গন্ডি না পেরুলেও আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহার করেন সিমা।পরিপটি পোশাক আর গহনায় সবসময়ই নিজেকে আকর্ষনীয় করে রাখেন। দেখলেই যে কারো মনে হতে পারে অভিজাত ঘরের মেয়ে তিনি।
আসলেই এখন অভিজাতভাবেই চলাফেরা করেন তিনি। কি নেই তার আছে গাড়ি, বাড়িসহ বিপুল অর্থবিত্ত। কিন্তু এক সময়ের দরিদ্র সিমার কীভাবে এত অর্থবৈভব আসেলো যে কারো প্রশ্ন আসতেই পারে।সেই প্রশ্নের উত্তরে রয়েছে সিমার ভয়ংকর উথ্যানের গল্প। মাদক, দেহ ব্যবসা থেকে শুরু করে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি।
সুন্দরী চেহারা দিয়ে পুরুষ শিকারও করেছেন। তার সুন্দরের মোহে যে পড়েছে তার সর্বনাশ হয়েছে। একে একে ৬টি স্বামী বদলিয়ে তিনি এখন আছেন ৭ নম্বরের ঘরে। আর রাজধানীর যে কয়েকজন মাদকসম্রাজ্ঞী রয়েছে সিমা তার সবার উপরে।
রামপুরার ওলনে তার বাড়ি হলেও রামপুরা, খিলগাাঁও, মুগদা, যাত্রাবাড়ী এলাকা পর্যন্ত তার মাদকের বিস্তার। এ ছাড়াও বাসা ফ্ল্যাট ভাড়া করে চালান দেহ ব্যবসা। আর এসব করেই বিপুল বিত্ত বৈভবের মালিক হয়েছেন সিমা।
গত কয়েকদিন আগে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের জালে ধরা পড়া ১২ ভুয়া ডিবি পুলিশের সিন্ডিকেটটিও তার। তার স্বামী বারেক এ সিন্ডিকেট পরিচালনা করতেন।
বারেক গোয়েন্দাদাদের হাতে ধরা পড়ার পর ছিনতাইয়ের টাকা উদ্ধার হয় এ সিমার কাছ থেকেই। বর্তমানে সিমাও ওই মামলায় আটক হয়ে জেল হাজতে রয়েছেন।
গ্রেপ্তারের পর তার নিকট থেকে পুরো সিন্ডিকেটের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। তাদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক টিম। যে কোনো মুহূর্তে সিন্ডিকেটের গ্রেফতারের সংবাদ আসবে।
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান সিমা মাদক সিন্ডিকেটের নেত্রী। দীর্ঘদিন ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে তিনি ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।
সিমার বিষয়ে অনুসন্ধানে মিলেছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। রামপুরার ওলনের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিমা মূলত তার নানা-নানীর বাসায় পালিত। স্কুলে পড়া অবস্থায় সুন্দরী সিমা ছিল ধূর্ত প্রকৃতির।
ক্লাশ সেভেন কিংবা এইটে পড়া অবস্থায় খসরু হায়দার বাবু নামের এক ধনি লোককে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন সিমা। ওই সময় বাবুর স্ত্রী ও সন্তান ছিলো। এরপর কিছুদিন সেখানে থাকার পর মোটা অংকের টাকা নিয়ে পলাশ নামের অন্য আর এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন।
কিছুদিন পলাশের সঙ্গে থাকার পর তার কাছ থেকেও টাকা হাতিয়ে আবারও চলে আসেন বাবুর নিকট। এরপর আবার বাবুর সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে কারওয়অ বাজারের হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী নজরুলকে বিয়ে করেন। এরপর সেখানেও কিছুদিন কাটনোর পর আবারও চলে আসেন রামপুরায়।
এভাবে সীমা একে একে ছয়টি স্বামী বদল করে রামপুরার আলোচিত নারীতে পরিণত হন। প্রথমে বিয়ের মধ্যেই সিমাবব্ধ থাকলেও মাদকে জড়িয়ে যান সিমা। এক সময় তার নাম হয়ে যায় ফেন্সি সিমা।
বেপরোয়া সিমা ক্রমেই তার পরিধি ও সহযোগীর সংখ্যা বাড়াতে থাকে। রামপুরা থেকে খিলগাঁও, খিলগাঁও থেকে সবুজবাগ, সবুজ বাগ থেকে যাত্রাবাড়ী পুরো এলাকায় সিমার দাপট। ইয়াবা, ফেন্সিডিল, প্যাথেডিন, গাঁজাসহ এমন কোনো নেশাদ্রব্য নেই যার ব্যবসা তিনি করেননি।
সিমা ফের একটি বিয়ে করেন। সর্বশেষ যাকে বিয়ে করেন সে আন্তঃজেলা ডাকাত ও ভুয়া ডিবি চক্রের অন্যতম দলনেতা বারেক। বারেককে সে এ কাজেই ব্যবহারের জন্য মূলত বিয়ে করে। বারেক সিমার পুরো মাদক জগৎ দেখাশুনার দ্বায়িত্ব পান।
সিমা নিজেকে বিকশিত করতে রামপুরা কতিপয় নেতাদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু করেন। মাদকসম্রাজ্ঞী হওয়া সত্বেও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনও করেন তিনি। সবাই জানে সিমা মাদকসম্রাজ্ঞী, তারপরও যেন কেউ জানে না।
মাদকের পাশাপাশি দেহ ব্যবসাও করান সিমা। অভিযোগ রয়েছে, রামপুরা, খিলগাঁও ও মালিবাগের বেশ কিছু ফ্ল্যাট রযেছে তার। আর এ সকল ফ্ল্যাটে দেহ ব্যবসা করান।
সর্বশেষ গত ১৮ জুলাই মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ১২ ভূয়া ডিবি পুলিশকে আটক করে। আটক হয় সিমার স্বামী বারেকও। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইয়ের ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা উদ্ধার হয় তার স্ত্রী মাদকসম্রাজ্ঞী সিমার কাছ থেকে। তাকে গ্রেপ্তারও করে গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনার পর এলাকাজুড়ে শুরু হয়েছে ননা গুঞ্জন।
রামপুরার সর্বত্রই তাকে নিয়ে চলছে আলোচনা। স্থানীয় কয়েকজন নেতাও বিব্রত। বিভিন্ন দলীয় কর্মকাণ্ডে সিমার সঙ্গে ছবি থাকায় তারাও রয়েছেন সমালোচনার মুখে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিমার অপ্রতিরোধ্য উথ্যানে কামিয়েছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। সামান্য দরিদ্র পরিবার হলেও সিমার এখন আভিজাত্যের শেষ নেই। আছে বাড়ি, গাড়ি ও কাড়ি কাড়ি টাকা। চলাফেরাও করেন সমাজের উচ্চ বিত্তবানদের সঙ্গে।
অভিযোগ রয়েছে, তার এ মাদক সম্রাজ্য ধরে রাখতে রয়েছে বিশেষ গুন্ডা বাহিনী। যারা প্রতিনিয়ত তাকে রক্ষা করে। তিনি যেখানে যান সেখানে অন্তত ১০/২০ জন গুন্ডা থাকে তার সঙ্গে। এগুলোকে মাসিক অথবা সাপ্তাহিক টাকা দেন সিমা।
এসব বিষয়ে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রলয় কুমার বলেন, আমি এ থানায় এসেছি এক বছর হল। আমি তাকে ওইভাবে চিনি না। বিভিন্ন প্রোগ্রামে তাকে দেখেছি। সে ভোটেও দাড়িয়েছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা আছে কি না বলতে পারবো না। তবে এক বছরের মধ্যে হয়নি। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে তিনি যুক্ত এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি সরাসরি কোনে উত্তর দেননি।
খিলগাঁও থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, খিলগাঁও থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা আছে বলে মনে হয় না। রামপুরায় কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি শুনেছেন ওই নারী মাদক ব্যবসায় যুক্ত। তবে তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার খন্দকার নূরুন্নবি বলেন, যেহেতু তার নিকট থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছি। আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সীমা যে মাদকসম্রাজ্ঞী আমরা তা জানি। তাকে গ্রেপ্তারের পর তার নিকট থেকে কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। সে যে গ্রুপগুলোর মাধ্যমে ব্যবসা করছিলো তাদের গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের টিম কাজ করছে।
|