মোঃ মনির হোসেনঃ নতুন সড়ক পরিবহন আইন স্থগিত রাখাসহ ৯ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ডেকেছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
এ কারণে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী সব পরিবহন বুধবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থেকেও না পেয়ে হাঁটতে শুরু করেছেন। অনেকে আবার ট্রেনলাইনে অপেক্ষা করছেন। ব্যক্তিমালিকাধীন গাড়িগুলোও বিপাকে পড়েছে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকায় এলোপাতাড়ি যানবাহন রেখে অবরোধ করে রাখেন পরিবহন শ্রমিকরা। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও যানচলাচল বন্ধ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ৬টা থেকেই পরিবহন শ্রমিকরা সাইনবোর্ড এলাকায় দাবি আদায়ে বিক্ষোভ শুরু করে। তখন ব্যক্তিমালিকাধীনসহ বেসরকারি গাড়ি চলাচল করছিল। পরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের সাইনবোর্ড এলাকায় এলোপাতাড়ি যানবাহন ফেলে রেখে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ঢাকামুখী রাস্তা বন্ধ করে দেয়।
এতে করে শিবু মার্কেট থেকেই এ সড়ক তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন যানবাহন। অতিষ্ঠ হয়ে যাত্রীরা যানবাহন থেকে নেমে হেঁটে যেতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের নারায়ণগঞ্জমুখী সড়ক ফাঁকা থাকালেও যানবাহন নেই।
সরেজমিন চাষাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীরা চাষাড়া বাস টার্মিনালে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছেন। কোনো বাস থাকায় অনেকেই বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। আর যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছে, তাদের কেউ ট্রেনের জন্য আবার কেউ হেঁটে রওনা হয়েছেন কিংবা রিকশায়।
সিএনজিচালিত অটোরিকশাও চলাচলে বাধা দিচ্ছেন শ্রমিকরা। শুধু মাত্র প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা ও লেগুনা চলাচল করতে দেখা যায়।
চাষাড়া এলাকায় অপেক্ষারত ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘অসুস্থ আত্মীয়কে দেখার জন্য সকাল ৬টায় ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে এসেছি। এখন ফিরে গিয়ে কাজে যোগদান করব। কিন্তু যানবাহন নেই। সময়মতো অফিসে না পৌঁছাতে পারলে চাকরিও থাকবে না।’
ঢাকার বেসরকারি কলেজের ছাত্র অমিত দাস বলেন, ‘কলেজে পরীক্ষা আছে ১০টায়। তাই সকাল ৮টায় বের হয়েছি, কিন্তু এখনও কোনো বাস পাচ্ছি না। সময়মতো কলেজে না পৌঁছাতে পারলে পরীক্ষাটা দিতে পারব না।
ফাতেমা বেগম বলেন, ‘ঢাকা যাব তাই সকাল ৭টা থেকে বাস টার্মিনালে বসে আছি। সব বাস বন্ধ। বলল বিআরটিসি বাস আসবে। কিন্তু তাও আসছে না।
পরিবাহন শ্রমিকরা বলেন, ‘আমরা গলায় ফাঁসি নিয়ে পরিবহন চলাব না। কারণ পরিবহন চালানো একটি সেবা। আমরা মানুষকে সেবা দিই। আর কেউ ইচ্ছা করে দুর্ঘটনা ঘটায় না। তার পরও কঠোর শাস্তির বিধান করেছে। আবার লাইসেন্স, গাড়ির কাগজসহ বিভিন্ন কিছুর জন্য হাজার গুন জরিমানা ধার্য করেছে। এগুলো কীভাবে পরিশোধ করব। আমরা সারা মাসে ২৫ হাজার টাকা ইনকাম করতে পারি না। ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হলে গাড়িসহ সংসারের জিনিসপত্র বিক্রি করতে হবে। এভাবে গাড়ি চলানো সম্ভব না। তাই আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এদিকে সাইনবোর্ড এলাকার রাস্তায় ফেলে রাখা যানবাহন সরিয়ে দ্রুত রাস্তা ফাঁকা রাখার জন্য ঘটনাস্থলে যান সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুক ও ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন।
ওসি আসলাম হোসেন বলেন, ‘নতুন সড়ক পরিবহন আইনের প্রতিবাদে শ্রমিকরা এ আন্দোলন শুরু করেছে। এখন কেন্দ্র থেকে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলছে। আমরা চেষ্টা করছি তাদের বুঝিয়ে রাস্তা ফাঁকা রাখতে।