আন্তজার্তিক শ্রমিক দিবস: মে দিবসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
30, April, 2019, 6:06:31:PM
মোঃ সোবাহান বেপারী : আন্তজার্তিক শ্রমিক দিবস (মে দিবস নামেও পরিচিত) মে মাসের প্রথম দিনটিকে পৃথিবীর অনেক দেশে পালিত হয়। বেশ কিছু দেশে মে দিবসকে লেবার ডে হিসেবে পালন করা হয়। এ দিনটি সরকারীভাবে ছুটির দিন। ১৯৮৬ সালের ১লা মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে- মার্কেটে ৮ ঘন্টা শ্রমদিনের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি চালানো হলে ১১ জন শহিদ হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডায় এইদিন পালিত হয় না। এইদিনে আরো কিছু ঘটনা রয়েছে যা আঞ্চলিকভাবে হয়তো পালিত হয়। পূর্বে শ্রমিকদের অমানবিক পরিশ্রম করতে হত। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘন্টা আর সপ্তাহে ৬ দিন।
বিপরীতে মজুরী মিলত জঘণ্য, শ্রমিকরা খুবই মানবেতর জীবন যাপন করত। ক্ষেত্রবিশেষ তা দাসবৃত্তির পর্যায়ে পড়ত। ১৯৪৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের একদল শ্রমিক দৈনিক ৮ ঘন্টা কাজ করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন এবং তাদের এই দাবী কার্যকর জন্য তারা সময় বেঁধে দেয় ১৯৮৬ সালের ১লা মে। কিন্তু কারখানা মালিকগণ এ দাবী মেনে নিল না। ৪ঠা মে ১৮৮৬ সালে সন্ধ্যাবেলা হালকা বৃষ্টির মধ্যে শিকাগো হে-মার্কেট নামক এক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিকগণ মিছিলের উদ্দেশ্যে জড়ো হন। তারা ১৮৭২ সালে কানাডায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল শ্রমিক শোভাযাত্রা সাফল্যে উদ্ধুদ্ধ হয়ে এটি করেছিলেন আগষ্ট স্পীজ নামে এক নেতা জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলছিলেন। হঠাৎ দূরে দাড়ানো পুলিশ দলের কাছে এক বোমার বিষ্ফোরণ ঘটে, এতে এক পুলিশ নিহত হয়। পুলিশবাহিনী তৎক্ষণাৎ পুলিশের উপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে যা রায়েটের রুপ নেয়।
রায়েটে ১১ জন শ্রমিক শহীদ হন। পুলিশ হত্যা মামলায় আগষ্ট স্পীজ সহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়। এক প্রহসনমূলক বিচারের পর ১৮৮৭ সালের ১১ ই নভেম্বর উন্মুক্ত স্থানে ফাসি কার্যকর করা হয়। লুইস লিং নামে একজন পূর্বেই কারাভন্তেরে আত্মহত্যা করেন, অন্য একজনের পনের বছরের কারাদন্ড হয়। ফাঁসির পূর্বে আরোহনের পূর্বে আগষ্ট স্পীজ বলেছিলেন, আজ আমাদের এই নিঃশব্দতা, তোমাদের আওয়াজ, অপেক্ষা আরো শক্তিশালী হবে। ২৬ শে জুন ১৮৯৩ ইলনদের গভর্ণর অভিযুক্ত আটজনকেই নিরপরাই বলে ঘোষনা দেন এবং বুয়েটের হুকুম প্রদানকারী পুলিশের কমান্ডারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করেন।
আর অজ্ঞাত সেই বোমা বিস্ফোরনকারীর পরিচয় কখনোই প্রকাশ পায়নি।শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের আট ঘন্টা কাজহ করার দাবী অফিসিয়াল স্বীকৃতি পায়। আর পহেলা মে বা মে দিবস প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দাবী আদায়ের দিন হিসেবে। পৃথিবীব্যাপি আজওতা পালিত হয়। শ্রমজীবি মানুষের আন্দোলনের উক্ত গৌরবমর অধ্যায়কে স্মরণ করে ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছরের ১ লা মে বিশ্বব্যাপী পালন হয়ে আসছে “মে দিবস” বা আন্তজার্তিক শ্রমিক দিবস। পহেলা মে সেই আন্দোলনের কথাই আমাদের স্মরণ করে দেয়। ১৮৯০ সালের ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিষ্ট কংগ্রেসে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোসনা করা হয় এবং তখন থেকে অনেক দেশে দিনটি শ্রমিক হিসেবে শ্রেণি কর্তৃক উদযাপিত হয়ে আসছে।
রাশিয়াসহ পরবর্তী কালে আরো কয়েকটি দেশে সমাজতান্ত্রিত বিপ্লব সংঘটিত হবার পর মে দিবস এক বিশেষ তাৎপর্য অর্জন করে। জাতিসংঘে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শাখা হিসাবে আন্তজার্তিক শ্রম সংস্থা (অরগানাইজেশনৎ বা আই.এল.ও) প্রতিষ্ঠা মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার সমূহ স্বীকৃতি লাভ করে এবং সকল দেশে শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের তা মেনে চলার আহ্বান জানায় এভাবে শ্রমিক ও মালিকদের অধিকার সংরক্ষণ করে। বাংলাদেশে অই.এল.ও কর্তৃক প্রণীত নীতিমালা স্বাক্ষরকারী একটি দেশ। সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা শ্রমিক শ্রেণির প্রদানের কারণে অধিকাংশ সমাজতান্ত্রিক দেশে বেশ গুরুত্বও সংকল্প সহকারে যে দিবস পালন করা হয়। বাংলাদেশে মে দিবসে সরকারি ছুটির দিন পালিত হয়। এখানেস বেশ উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে মে দিবস পালিত হয়।