মোঃ মিজানুর রহমানঃ নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে। ধর্মঘটে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ বেশির ভাগ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। যাত্রীদের জি্ম্মি করে এ কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
যাত্রী সাধারণকে জিম্মি করে যে বা যারা এ কর্মসুচি পালন করছে, তারা সবার চেনা-জানা। তাদের লক্ষ-উদ্দেশ্যও অজানা নয়। গায়ের জোরে সাধারণ মানুষকে বিপাকে ফেলে তারা আইন ও নীতি পরিবর্তন করতে চায়।আইনের প্রতি এমন অশ্রদ্ধা আইয়ামে জাহিলিয়াতেই সম্ভব।কোনো সভ্যসমাজ এটা মেনে নিতে পারে না।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, যারা আইন অমান্য করতে প্রকাশ্য কর্মসূচি দেওয়ার দুঃসাহস দেখাছে, ওরা কারা।ওদের একমাত্র ও অন্যতম পরিচয় ক্ষমতাসীনদের লোক। যাদের সুখে-দুঃখের সঙ্গী তারা। তাদের সুখে তারা হাসে। আর তারা কষ্টে থাকলে এরা চোখের পানিতে বুক ভাসায়।গাড়ি থেকে চাঁদাবাজির বড় একটা অংশ যারা বড় বড় নেতাদের মাসোহারা দেয়।
নিয়মিত এই মাসোয়ারা যারা দেয়, স্বাভাবিকভাবেই তারা দুঃসাহস দেখাবে। আর এটা নীরবে হজম করছেন মাসোয়ারাপ্রাপ্তরা। যার সফল মঞ্চায়ন সবার সামনেই উপস্থিত।আইন না মানার এমন সংস্কৃতি দেশে আইনের শাসন বাস্তবায়ন ও কার্যকরের পথে বড় বাধা। এমন বাধা দূর করতে দায়িত্বশীলদের নড়েচড়ে বসা অতীব জরুরি।
জনগণের সড়কে অবৈধভাবে গাড়ি রাখবেন, আবার জনগণকে জিম্মি করে বেআইনি দাবি পূরণে বাধ্য করতে এটা হতে পারে না।এটা মামার বাড়ির আবদার নয়। গাড়ি চালাতে হলে আইন মানতে হবে। আর যে আইন হয়েছে, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরাতে এর চেয়ে আরো কঠোর আইন সময়ের দাবি।যে আইন হয়েছে, এটা নামকাওয়াস্তে।আইন না মানার সংস্কৃতির ফলে ওদের বড় বাড় বেড়েছে।
আইন ও নিয়ম মেনে গাড়ি যারা চালবে না, তাদের গাড়ি সড়কে থাকার যুক্তি নেই। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো এবং মানুষ মারার মিছিল চিরতরে বন্ধে আইনটির দ্রুত প্রয়োগ জরুরি। এক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া মানে লাইচেন্সবিহীন চালকের হাতে মানুষ মারার লাইসেন্স তুলে দেওয়া।আইন মেনে রাস্তায় গাড়ি চালাতে মালিক-শ্রমিকদের এত ভয় কীসের?
নাটের গুরুরা পর্দার আড়ালে থেকে আন্দোলনের নামে এসব খুচরা চালাকি করে যাচ্ছে। অন্যদের সামনে পাঠিয়ে তারা এটিকে সান দিচ্ছে।এসব ক্ষমতাসীনদের কমবেশি জানা। কিন্তু মাসোয়ারার কারণে তারা নাকি সেভাবে কিছু বলছেন না।এতে মালিকপক্ষের শক্তি ও সা্হস বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের নাকি বলে দেওয়া হচ্ছে, তোমরা চালিয়ে যাও; তাহলে চলমান সংসদেই আইনটি পরিবর্তন করা হবে।
এমন আশকারা পেয়েই মালিকরা মাঠে নেমেছে বলে একটি সূত্র জানায়।এমনটা খুবই দুঃখজনক। সড়ক আইনটি অসংখ্য জীবনহানি ও আন্দোলন পরই সময়ের অন্যতম দাবি হিসেবে করা হয়।এতেও অনেক ফাঁকফোকর রয়ে গেছে।এটি আরো কঠোর করার দাবি ছিল দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের। অনেক চুলচেরা বিশ্লেষণের পর সব পক্ষের প্রতিনিধির সম্মতিতে করা আইনটি নিয়ে চলমান আন্দোলন অনেকটা চোরের মার বড় গলার শামিল।
সড়কে কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা ফিরে আনা এবং মানুষের জীবনহানি রোধে সম্প্রতি করা আইনটি অনেকটা সুফল দেবে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। আইন মেনে চলা সবার জন্যই মঙ্গল।যারা আইন মানতে চায় না, তাদের মধ্যে যে সমস্যা আছে; এটা বদ্ধ পাগলও বোঝে।চির শুভ, সুন্দর, মঙ্গল ও কল্যাণের এ পথকে যারা বাঁকা চোখে দেখছে- তাদের চিনতে, বুঝতে ও জানতে জজ-ব্যারিস্টার হওয়ার দরকার নেই।
নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবি মানে সড়কে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে যাত্রী ও সাধারণ মানুষের মৃত্যুর মিছিলকে দীর্ঘ করার অবাধ লাইসেন্স তুলে দেওয়া। বরং সড়কে কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা ফিরে আনতে এই আইনকে কীভাবে আরো যুগোপযোগী ও শাণিত করা যায়, সেটাই অধিক যুক্তিযুক্ত।এর বাইরে যাওয়া মানে মালিক ও শ্রমিকদের এতদিনের অনিয়ম ও নৈরাজ্যকে আরো উসকে দেওয়া।স্পষ্ট করে বললে আগুনে ঘি ঢালা।এমনটা হলে হবে আত্মঘাতী।যা শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন কারো কাম্য নয়।