ছবিঃ এ্যাটাচমেন্ট ফাইলে
বংশ পরম্পরায় আগৈলঝাড়া ভসমান সবজি চাষ করে কৃষ । ধাপ পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে।বছরের বেশিরভাগ সময় পানিতে ডুবে থাকে জমি। এসব জমিতে বিশেষ প্রক্রিয়ায় ভাসমান ধাপ তৈরি করা হয়। এরপর ধাপের ওপর বপন করা হয় বেগুন, পেঁপে, লাউ, শিম, কুমাড়া, টমেটো, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, কাঁচা ও বোম্বাই মরিচ, করোলা, শসা ও বরবটির বীজ।
এই পদ্ধতির চাষাবাদে যুক্ত মো.জলিল বলেন, কচুরিপানা, শ্যাওলা ও দুলালীলতা এস্তরে এস্তরে সাজিয়ে দুই ফুট পুরুকরে (ধাপ) বা ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়। একেকটি ভাসমান ধাপ ৫০-৬০ মিটার লম্বা ও দেড় মিটার চওড়া। ধাপে সরাসরি বীজ বপন করা যায় না। তাই কৃষকরা প্রতিটি বীজের জন্য এক ধরনের বীজতলা তৈরি করেন। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘দৌলা। ছোট কচুরিপানা ও দুলালীলতার মধ্যে নারকেলের ছোবড়ার গুঁড়া দিয়ে দৌলা তৈরি করা হয়। এর মধ্যে বিভিন্ন সবজির অরত বীজ পুঁতে মাচানে বা শুকনো জায়গায় রাখা হয়। এর আগে ভেজা জায়গায় অঙ্কুরিত করা হয় বীজ।
দৌলাগুলো এভাবে তিন থেকে সাত দিন সারি করে রাখা হয়। এরপর বসানো হয় ধাপে। পাঁচ-ছয় দিন পরপর ধাপের নিচের কচুরিপানার মূল বা শ্যাওলা দৌলার গোড়ায় বিছিয়ে দেওয়া হয়। একটি অঙ্কুর বীজতলায় রোপণ করার ২০ থেকে ২২ দিনের মধ্যে পূর্ণ বয়স্ক চারা হয়ে ওঠে। ধাপে দৌলা স্থাপন থেকে শুরুকরে পরিচর্যা পুরুষরা করেন। তবে দৌলা তৈরি করেন নারীরা। ৫০-৬০ মিটারের একটি ধাপ তৈরিতে প্রায় দশ হাজার টাকা খরচ পড়ে।
কৃষকরা জানান, একটি ধাপের ওপর কয়েকবার চাষাবাদ করা যায়। পানি থাকা অবস্থায় দীর্ঘদিন ধাপের কোনও সমস্যা হয় না। একটি চাষ শেষ করার পর ধাপে আবারও
কচুরিপানাসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ দিলে তা আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। তবে পানি শুকিয়ে গেলে এ ধাপের কোনও কার্যকারিতা থাকে না।
ধাপে যা উৎপাদন হয় তা বরিশাল বিভাগের ছয় জেলা শহর থেকে শুরুকরে পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট ও মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যায় খুচরা ও পাইকাররা। তবে এতে আশাতীত লাভ নেই। তারপরও যা আয় হয় তা দিয়ে ভালোভাবে বছর কেটে যায় বলে জানান তারা।
স্থানীয়রা জানান, জন্মের পর থেকে এই ভাসমান চাষাবাদ দেখে আসছেন তারা। আর যারা এ চাষাবাদে জড়িত তাদের পরিবার-পরিজনই ভাসমান ধাপ তৈরিতে সাহায্য করে। পরিবারের প্রতিটি সদস্য এ কাজে সম্পৃক্ত। বিশেষ করে নারীরা ধাপ তৈরিতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে আসছেন।
তারা আরও বলেন, পূর্ব পুরুষরা যেভাবে ধাপে চাষাবাদ করে আসছেন, সেই প্রক্রিয়াতেই কাজ করছেন তারা। কৃষি অফিস থেকে এ কাজের জন্য কোনও সহায়তা পান না। উল্টো কৃষি অফিসের লোকজন এসে ধাপ তৈরির প্রক্রিয়া জানতে চান।
আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন চন্দ্র রায় বলেন, বর্তমানে ২০০ হেক্টর ভাসমান বেডে চাষাবাদ হচ্ছে। সেখানকার প্রায় চার থেকে পাঁচশতে পরিবার এর সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে সেখানে বাণিজ্যিকভাবে লাউ, শিম, বেগুন, ফুলকপি, ওলকপি, বরবটি, করলা, পুঁইশাক, মিষ্টি কুমড়া, ধনেপাতা, ডাঁটা, টমেটো, আদা, হলুদ, পেঁপে ও মরিচসহ বিভিন্ন চারা উৎপাদন করা হচ্ছে। এতে তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা এসেছে। এ ছাড়া ধাপে সবজি চাষ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তা পাঠানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আগে বছরে একবারই নিচু এলাকার জমিতে চাষাবাদ করতেন কৃষকেরা। বাকি সময় জমিতে পানি জমে থাকায় জমি অনাবাদি থাকতো। বদ্ধ পানিতে আগাছা ও কচুরিপানায় ভরে যেত মাঠের পর মাঠ। বোরো ধান কাটার পর বর্ষা মৌসুমে নিম্নঞ্চলের ফসলবিহীন আবাদি ক্ষেত যখন পানিতে তলিয়ে থাকে, তখন হাত গুটিয়ে বসে না থেকে গাছের চারা ও ফসল উৎপাদনের এ উপায় বের করেন এখানকার কৃষকরা।