উম্মে সালমা উর্মি
স্টাফ রিপোর্টার
চুক্তিভিত্তিক চাষপদ্ধতিতে ভুট্টা চাষিদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্য নিয়ে গত
বছরের নভেম্বরে ইউনাইডেট কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি’র (ইউসিবি) সহযোগিতায় একটি প্রকল্প চালু করে ফুল-স্ট্যাক
অ্যাগ্রিটেক স্টার্টআপ আইফার্মার। এই প্রকল্পের অধীনে কৃষকরা মাত্র ১০ টাকায় ইউসিবি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট
খোলার সুযোগ পান। পাশাপাশি, তারা আইফার্মার থেকে আর্থিক সুবিধা ও অন্যান্য কৃষি-ভিত্তিক সহায়তা পান। সম্প্রতি
সফলভাবে ভুট্টা চাষ ও বিক্রয় করার পর চাষিরা ঋণের পুরো অর্থই পরিশোধ করেন।
আইফার্মার ও ইউসিবি’র সহায়তায় বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধার চরাঞ্চলের ভুট্টা চাষিরা এই আর্থিক সুবিধা
গ্রহণ করেন। এছাড়া, আইফার্মার সময় উপযোগী তথ্য-উপাত্ত, আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও বিশেষজ্ঞ সেবা দিয়ে চাষিদের
সাহায্য করেছে। আর্থিক সহায়তা পাওয়ার পরপরই চাষিরা কাজ শুরু করেন। এই পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে
আইফার্মারের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা চাষিদের নিয়মিত সহায়তা প্রদান করেন এবং পর্যবেক্ষণে রাখেন।
নানান প্রতিকূলতা সত্ত্বেও চাষিরা ভুট্টার বাম্পার ফলন নিশ্চিত করতে সক্ষম হন। আইফার্মার তাদের নিজস্ব
সরবরাহ-শৃঙ্খলের (সাপ্লাই চাইন) মাধ্যমে চাষিদের সকল ভুট্টা কিনে নিয়ে অর্থ পরিশোধ করে। মোট ৫৩৫ জন কৃষককে
২ কোটি ৭ লাখ ৫৯ হাজার টাকার আর্থিক সুবিধা দেয়া হয়। আইফার্মার রিটেইল-ভিত্তিক অর্থায়নের মাধমেও বেশ
কয়েকজন কৃষকের জন্য তহবিল নিশ্চিত করে। এছাড়া, আইফার্মার পরিচালিত একটি অভ্যন্তরীণ সমীক্ষায় দেখা যায়,
এই প্রকল্পে আইফার্মারের তত্ত্বাবধানে যারা ঋণ গ্রহণ করেছেন তারা লাভবান হয়েছেন। যেসব চাষি আগের বছর অন্য
কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছিলেন তারা গত বছরের তুলনায় এই বছর ৫০-৬৭ শতাংশ মূলধন সাশ্রয়
করতে সক্ষম হয়েছেন। কৃষকরা মোট ৪,০৩৩.১২ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন করেছেন।
এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে আইফার্মারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ফাহাদ ইফাজ বলেন, “আমরা চাষিদের আর্থিক
অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, আর এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে
ব্যাংক। আগামীতে আরও বেশি চাষির কাছে পৌঁছানোর জন্য আমরা নিরলস কাজ করে যাবো।”
ইউসিবি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক এটিএম তাহমিদুজ্জামান বলেন, “কৃষকদের জন্য আর্থিক সেবা সহজলভ্য
করাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। আইফার্মার এই উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।”
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরের চর এলাকার বাসিন্দা কৃষক মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা এই উদ্যোগ সম্পর্কে বলেন,
“আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে আমি ঠিকমতো জমি চাষ করতে পারছিলাম না। পরে আমি আইফার্মারের আর্থিক
সহায়তার কথা জানতে পারি। এই প্রকল্পের অধীনে আইফার্মার এর সহায়তায় ইউসিবি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ
করে ২৭০ ডেসিমেল জমি চাষ করি। আমি এ বছর ১৪,৪৪০ কেজি ভুট্টা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। আইফার্মারের এই
আর্থিক সহায়তার কারণে আমি ভাল মুনাফা অর্জন করার পাশাপাশি সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পেরেছি।”
উল্লেখ্য, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে চরাঞ্চলের কৃষকরা এবারই প্রথম আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মকাণ্ডে
অন্তর্ভুক্ত হলো। চরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নত করতে আইফার্মার প্রতি বছর এমন উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
|