রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা পরিষদের সহয়তায় কৃষি বিভাগের পরিকল্পনায়, ২৫০ জন কৃষকের অক্রান্ত পরিশ্রমে, তালুকশাহাবাজে তিস্তা নদীর জেগে উঠা ধু-ধু বালুচরে কৃষি বিপ্লবের মাধ্যেমে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছে চাষিরা। কৃষক কৃষাণীর হাতের ছোঁয়ায়, কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষি বিভাগের কারিগড়ি সহায়তায় বদলে গেছে চরাঞ্চলের চিত্র। যে তপ্ত বালু চরে হাটা যেতনা, জন্মিত না ঘাস, সেই বালু কে এখন সাদা সোনায় পরিনত করেছে এলাকার কৃষক। বর্তমানে দিগন্ত জুরে শুধু সবুজের হাত ছানি। এই চরে একবার তাকালে আর চোখ ফেরান যায় না। যে কোন প্রকৃতি প্রেমিকে কাছে টানে তালুকশাহবাজ চর সহ বেশ কিছু চরে মিষ্টি কুমড়াসহ নানা ফসলের সবুজের সমারহ। তিস্তার জেগে ওঠা বালুচরে কুমড়া চাষে আর্থিক লাভবান হওয়ার স্বপ্ন বুনছেন ২৫০জন চাষী। কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি চাষে কৃষকের ভাগ্য বদলের হাত ছানি দেখা দেওয়ায় কৃষকেরা উৎফুল্ল। তিস্তার তপ্ত বালুতে মানুষ হাটতে না পারলেও সেই বালুতে প্রযুক্তি নির্ভর হাইব্রিড ব্যাংঙ্কক-১, কাশিহরি, দেবগীরি, কালো পাথড়ী জাতের কুমড়া সহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে এলাকাবাসী কে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তিস্তা পাড়ের চাষীরা। সরেজমিনে তালুক শাহবাজ চরে গিয়ে দেখা গেছে সবুজে সবুজে ভরে গেছে। তিস্তার জেগে উঠা চরে এখন চাষ হচ্ছে আলু, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, গম, ভুট্ট্রাসহ নানা বাহারী সবজি। শুধু তাই নয় পুরো চরেই যাতে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করা যায় সে জন্য শোভা পাচ্ছে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়োলো স্টিক ট্রাপ এবং প্রাকৃতিক ভাবে পরাগায়নের জন্য মৌ চাক। চরের মনমুগ্ধকর সবুজের সমারোহ যে কোন প্রকৃতি প্রেমিকে কাছে টানে। কুমড়া চাষী আসাদুজ্জামান চৌধুরী তোতা, স্বাধীন, প্রফুল্ল, কৃষানি নাজনিন জানন রাক্ষসী তিস্তার পানি কমে গিয়ে নদীর বুকে জেগে ওঠেছে চর। সেই চরে কৃষি কর্মকর্তা শাহানাজ পারভীনের দিক নির্দেশনায় ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় নতুন প্রযুক্তিতে কুমড়া সহ বিভিন্ন ধরনের বিষ মুক্ত সবজি চাষ শুরু করেছি। ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে গর্ত খুরে বীজ রোপণ করেছি। গর্তে প্রয়োজনীয় জৈব সার দিয়ে কয়েকদিন ঢেকে রেখে তিন চারটি করে বীজ রোপণ করেছি। এখন গাছে ডালপালা মেলে ধরেছে কুমড়া। প্রতিটি গাছে ৩ থেকে ৪টি পর্যন্ত কুমড়া ধরেছে। ১টি করে কুমড়া নিন্মে ৩ থেকে ৭ কেজি পর্যন্ত ওজন হবে। তারা বলেন কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে তারা আশাতীত ফলন পাবেন। কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে তিস্তার চর সহ প্রায় ৫০০ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করা হয়েছে। ৬০ জন চাষীকে কে বীজ, সার, সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়োলো স্টিক ট্রাপ সহ কারিগরী সহায়তা প্রদান করেছে কৃষি বিভাগ। চরে প্রায় ৩ হাজার টন কুমড়া উৎপাদনের আশা করছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানাজ পারভীন জানান, চরে অনাবাদি জমিকে আবাদের আওতায় আনা, চরের শ্রমজীবি কৃষকের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমৃদ্ধি, নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করনসহ চরাঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থন সৃষ্টি করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মনোনীতা দাস বলেন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনা এবং ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা পরিষদ কৃষি টিম। তিস্তা চরে উৎপাদিত কুমড়া সম্পূর্ন নিরাপদ ও বিষ মুক্ত। ফলে এর বাজার মূল্য বেশী হবে বলে আশা করছি।