রংপুরের তিস্তা নদীতে জেগে উঠা চরে প্রকৃতি যেন সবুজের পসরা সাজিয়ে বসেছে। কৃষকের পরম যত্নে দিগন্ত জুড়ে লক লক করে বেড়ে উঠছে ভুট্টা ক্ষেত। চাষাবাদে অল্প খরচ আর অধিক ফলন এবং বেশী লাভ হওয়ায় রংপুরের কাউনিয়ায় তিস্তা নদীতে জেগে উঠা চরসহ বেশীরভাগ জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন চাষীরা। চলতি মৌসুমে ভুট্টার বাম্পার ফলনেরও আশা করছেন তারা।
সরেজমিনে তিস্তা নদী বেষ্টিত বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, আগে যেসব চরে কোনো ফসল হতো না সেসব চরের জমিতে এবার ভুট্টার চাষ হয়েছে। উপজেলার চর নাজিরদহ, চর চতুরা, প্রার্নাথ চর, গুপিডাঙ্গা, আরাজি হরিশ্বর, চর গদাই, পাঞ্জরভাঙ্গা, চর ঢুসমারা, চর গনাই, চর বিশ্বনাথ, চর আজম খাঁসহ ২৯টি চর ও বিভিন্ন গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ভুট্টা চাষ হয়েছে। আরাজি শাহাবাজ গ্রামের ভুট্টা চাষী রেজাউল জানান তিনি চলতি মৌসুমে ১০ দোন (২৫শতকে ১ দোন) জমিতে আগাম জাতের ভুট্টা রোপন করেছেন। ফলন মোটামুটি ভাল এসেছে, তাই তিনি ভাল দাম পাওয়ার আশা করছেন।
নাজিরদহ গ্রামের কৃষক মেনাজ উদ্দিন জানান তিনি এবার ১ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। তার খরচ হয়েছে ৩৮ হাজার টাকা। তিনি ৩০ থেকে ৩৫ মন ভুট্টা ফলনের আশা করছেন। বর্তমানে ভুট্টার বাজার মূল্য ১ হাজার দুইশ থেকে ১৪ শত টাকা মণ। তিনি আরও জানান ভুট্টার পাতা গো-খাদ্য আর ভুট্টা গাছ রান্নায় জ্বালানির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী গদাই গ্রামের ভুট্টা চাষী আল-আমিন জানান ভুট্টা চাষে সামান্য সমস্যা রয়েছে। তা হলো মাড়াই ও বাজারজাত করা। এ ছাড়াও রয়েছে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও ব্যাংক ঋণের অভাব। কৃষকরা সহজ শর্তে কিস্তিতে মাড়াই মেশিন, কৃষি ঋণ, চাষাবাদে আধুনিক প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ, উন্নত মানের বীজ, সংরক্ষনাগার ও বিপনন ব্যবস্থা চালুর দাবী জানান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহানাজ পারভীন জানান, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৭৮৮ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, চাষ হয়েছে ৯৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হেক্টর প্রতি ৭.২৫ মেট্রিক টন ধরা হয়েছে। অবহাওয়া ভাল থাকায় ফলন ভাল হবে আশা করছেন। এছাড়া ২৯০ জন কৃষককে সরকারি প্রণোদনা হিসাবে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, এ বছর রংপুরের ভুট্টা চাষীরা দুচোখ ভরে যে স্বপ্ন দেখছেন তা যেন সত্যে পরিণত হতে চলেছে।