আসাদুজ্জামান আসাদ, পার্বতীপুর, দিনাজপুর প্রতিনিধিঃ যে বয়সে মানুষের শরীর নুয়ে পড়ে তা প্রবীণ বয়স। এই বয়সেই অধিক দরকার একজন প্রবীণের স্বাস্থ্য সেবার। গ্রাম মহল্লা কিংবা পাড়ার দরিদ্র প্রবীণরা দিন দিন নুয়ে পড়ছেন স্বাস্থ্য সমস্যায়। বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাচ্ছেন কেউবা মৃত শয্যায় পড়ে থাকছেন অথচ এই দরিদ্র প্রবীণদের স্বাস্থ্য সেবার দিকে নজর দেবার জে্যাঁ নেই পরিবার, সমাজ কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের। তারা প্রবীণদের স্বাস্থ্য সেবার বিষয়টিকে তেমন গুরুত না দিলেও ক্রমান্বয়ে প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি ইঙ্গিত করে যে তাদের উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন, শিশু ও মাতৃহার হ্রাসে বিভিন্নমূখী পদক্ষেপ গ্রহণে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে এ কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। বাংলাদেশ সরকার কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো মানুষের দোড় গোড়ায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা পৌঁছে দিয়েছে বটে। তবে, এলাকার জনগণ সুফল ভোগ করলেও প্রবীণ জনগোষ্ঠির স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নে তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি বলে বিভিন মহলের সাথে কথা বলে জানা যায়। দিনাজপুরের বিভিন্ন দরিদ্র প্রবীণেরা মনে করেন তাদের নিকটস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে প্রবীণ বান্ধব চিকিৎসা সেবার অভাব রয়েছে এবং সেই সাথে তাদের নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদেরও অবহেলা রয়েছে। প্রবীণরা সাধারণত শ্বাস কষ্ট, বাতের ব্যথা, পায়ে ও কোমরে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, দৃষ্টিশক্তি কম যাওয়া, চোখে ছানি পড়া, শারিরীক দূর্বলতা, পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব, আলজাইমার্স, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিকস বার্ধক্যজনিতসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত হলেও জেলা উপজেলা এবং ইউনিয়নের কোথায়ও প্রবীণদের স্বাস্থ্যগত বিষয়টিকে আলাদাভাবে নজর দেয়া হচ্ছে না অভিযোগ করেন ফুলবাড়ি ও পার্বতীপুর উপজেলার প্রবীণেরা। পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের পাঁচ ঘড়িয়াগ্রামের অবিজন বিবি’র (৭৫) সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাত ব্যথা, পায়ে ও কোমরে ব্যথায় ভুগছেন। তিনি এলাকার মানুষের পরামর্শে বড়পুকুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সেবা নিতে যান। কিন্তু সেখানে তিনি যে চিকিৎসা সেবা পান তাতে তার কোন কাজে আসে না। তিনি জানান, ‘‘ মুই অনেকদিন থাকি ওষুধ খাও, মোর হাত-পাও-কোমরের বিশ কমে না। মুই ক্লিনিকত ও হাসপাতালত গ্যাছনু; মোক কেহ দামে দেয় না, মুই গরিব মানুষ দাকতারের কাছত গেহিলে মোর কোন কতা শুনবারে চাহে না, দুক’না বড়ি দিয়া বাইর করিয়া দেয়। কি করিম বাপুরে এই অসুখ নিয়ায় মোক মরা নাগিবে। শুধু অবিজন বিবি’র মত উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের বালাপাড়া গ্রামের কায়ছার রহমান (৬৭), পলাশবাড়ি ইউনিয়নের পলাশবাড়ি গ্রামের আব্দুল গফুর (৭৫), হাবড়া ইউনিয়নের চৌপতি গ্রামের রহিমা বেওয়াও (৭২) তাদের নিকটস্থ চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রে গেলেও প্রবীণ বান্ধব কোন চিকিৎসা সেবা পান না। অবিজন বিবি, আব্দুল গফুর কিংবা রহিমা বেওয়াই নয় এরকম হাজারো প্রবীণ অবিজন বিবি চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং বিনা-চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। অথচ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রবীণ নীতিমালা-২০১৩ তে প্রবীণ স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। প্রবীণরা প্রবীণ বান্ধব স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানান এবং সাধারণ চিকিৎসা লাভের জন্য প্রবীণরা চিকিৎসা কেন্দ্রে গেলে চিকিৎসার জন্য যেন দীর্ঘ অপেক্ষা এবং লাইনে দাঁড়িয়ে না থেকে তারা যাতে সুচিকিৎসা পায় সে বিষয়ে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার অনুরোধ জানান। এ ব্যাপারে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্র এর পঃপঃ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নুরুল ইসলাম-এর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে চিকিৎসার জন্য অনেক রোগী আসে কিন্তু প্রবীণদেরকে আলাদাভাবে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয় না, তবে সরকারীভাবে নির্দেশনা আসলে প্রবীণদের জন্য আলাদা সিট বরাদ্দসহ আমরা বিশেষ নজর দিতে পারব।’’