রূপগঞ্জে বেকারীতে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরী হচ্ছে খাদ্য সামগ্রী
15, February, 2020, 5:22:2:PM
নিজাম উদ্দিন আহমেদ-রূপগঞ্জঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ যত্রতত্র গড়ে উঠা বেকারীগুলোতে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরী হচ্ছে খাদ্য সামগ্রী। রুপগঞ্জবাসী রয়েছে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। দেখার কেউ নেই। সরকারের খাদ্যনীতির কোন তোয়াক্কা না করে নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নি¤œমানের উপকরণ দিয়ে এসকল বেকারীতে অবাধে তৈরী করা হচ্ছে। কারখানাগুলোর নেই কোন অনুমোদন। তার পরও তাদের রমরমা ব্যবসা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় রূপগঞ্জে আনাচে কানাচে গড়ে উঠা নামে বেনামে সাইনবোর্ড ছাড়া বেকারীতে তৈরী হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে, বি¯ু‹ট, চানাচুর, কেক, পাউরুটি, মিষ্টি, সন্দেশ। পাড়ার মহল্লার দোকান থেকে শুরু করে নামী-দামি দোকানেও বিক্রি হচ্ছে বিস্কুট, চানাচুর, কেক, পাউরুটি, মিষ্টি, সন্দেশসহ নানা বাহারী মুখরোচক খাবার। কখনো কি কেউ ভেবে দেখেছে এই খাবারগুলো কোথায় থেকে আসছে? কোথায় তৈরী হচ্ছে? কি দিয়ে তৈরী হচ্ছে এসব খাবার? এসব খাদ্য পণ্যের মান নিয়ন্ত্রন ও যাচাই করার দায়িত্বে যারা আছেন তারা কি তাদের দায়িত্ব পালন করছেন? এক কথায় না। স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নি¤œমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরী করা হচ্ছে বেকারী সামগ্রী। কারখানার ভেতরে যেখানে তৈরী খাবার রাখা আছে সেখানেই নোংরা পরিবেশ, রয়েছে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ, কেমিক্যাল এবং একাধিক পাম-ওয়েলের ড্রাম। আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের তৈরী পণ্য। শ্রমিকরা খালি পায়ে এসব পণ্যের পাশ দিয়ে হাঁটাহাটি করছে। আটা ময়দা প্রক্রিয়াজাত করানো কড়াইগুলোও রয়েছে অপরিস্কার ও নোংরা। ডালডা দিয়ে তৈরী করা ক্রিম রাখা পাত্রগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভন ভন করছে। উৎপাদন ও মেয়াদোর্ত্তীন তারিখ ছাড়াই বাহারি মোড়কে বনরুটি, পাউরুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারী সামগ্রী উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। বিএসটিআই এর কোনো অনুমোদন নেই। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেখা মেলেনি । কখনো এসব কারখানায় অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করা হয় নাই। প্রতিদিন বেপোরোয়া গতিতে চালাচ্ছে তাদের পণ্য উৎপাদন। তাছাড়া এসব বেকারির মালিকরা বিকল্প বেকারি মোড়কে ২ নম্বর খাদ্য সামগ্রী উৎপাদন করে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন চায়ের দোকানে সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফজরের পরই কোম্পানির ভ্যানে বিভিন্ন এলাকার পাড়া মহল্লায়, অলিগলির জেনারেল স্টোর ও চায়ের দোকানে ওই সব পণ্য পৌছে দেন ডেলিভারিম্যানরা। উপজেলার বিভিন্ন চায়ের স্টলে গিয়ে দেখা যায়, বিকল্প বেকারির মোড়কে একাধিক পলি প্যাকেটে ঝুলছে পাউরুটি, বাটারবন, কেক, পেটিস, সিঙ্গারাসহ অন্যান্য খাদ্য পণ্য। বিকল্প বেকারীর উৎপাদিত বেকারি সামগ্রী পাউরুটিসহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর মোড়কে বিএসটিআই, বিডিএস নম্বর লেখা নেই। মোড়কের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদোর্ত্তীণ লেখা নেই কত তারিখে উৎপাদন হয়েছে বা মেয়াদ কবে শেষ হবে তার কোন উল্লেখ নেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ভেজাল কেমিক্যাল ও নি¤œমানের উপকরণ দিয়ে তৈরী করা এসব খাবার সামগ্রী খেলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে। পেটব্যথা, শরীর দূর্বলসহ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি রয়েছে। তারা আরো বলেন, মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এসব ভেজাল খাদ্য উৎপাদন বন্ধ করতে সামাজিক আন্দোলন তোলার কোন বিকল্প নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার এক কর্মচারী বলেন, দিনের বেলায় তারা কোন পণ্য উৎপাদন করেন না। ফজরের আগেই পণ্য উৎপাদন শেষ হয়ে যায়। রাতে ভ্রাম্যমান আদালত ও পুলিশের ঝামেলা কম বলেই পণ্য উৎপাদন রাতেই শেষ করে থাকে। চা দোকানী আলতাফ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা গরীব মানুষ, ফুটপাতে চা-পান বিক্রি করে সংসার চালাই। উৎপাদনের তারিখ দেখার সময় নাই। কাস্টমাররা তো আর এসব জিজ্ঞাস করে না। প্যাকেট থেকে কোনমতে তুলে চা বা কলা দিয়ে খেতে ওই সব বেকারি সামগ্রী কিনে নিচ্ছে। বেকারীর ম্যানেজারের কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, আমাদের কারখানায় মালিকের হুকুম ছাড়া এ ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারবো না। আপনারা পারলে যা কিছু লিখেন গিয়ে। পরে একাধিক কারখানায় গিয়ে মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া যায় নি। মোবাইল ফোনেও যোগাযোগের চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায় নি। এ ব্যাপারে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর বলেন, যেসব কারখানায় অস্বাস্থ্য ও নোংরা পরিবেশে ভেজাল খাদ্য তৈরী করেছে ওই সব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে তাদেরকে খাদ্য আইনে সংশোধন হওয়ার পরামর্শ দিব। খাদ্যনীতিমালা অমান্য করিলে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।