রপ্তানি পণ্যের আড়ালে বিদেশে পাচারের সময় গত বুধবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ থেকে জব্দ করা ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম অ্যামফিটামিন চীন অথবা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আনা হয়েছে বলে মনে করছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের যুক্তি, ইউরোপের দেশগুলোতে বহুল প্রচলিত ভয়ঙ্কর এ মাদক বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। আশপাশের দেশগুলোর মধ্যে উৎপাদন হয় চীন ও মিয়ানমারে। কাজেই এ দুটি দেশের একটি থেকেই হয়তো এ দেশে এসেছে প্রায় ২৪ কোটি টাকা মূল্যের এ মাদক। কর্মকর্তারা মনে করছেন, শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে এটি অস্ট্রেলিয়ায় পাচারের চেষ্টা চলছিল।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ধারণা, বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লিমিটেড (ফেডেক্স) কুরিয়ার সার্ভিসের কয়েকজন কর্মী এ পাচারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আন্তঃদেশীয় অপরাধী চক্র বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করছিল। এদিকে বুধবার মাদক জব্দের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬ জনের বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার বিমানবন্দর থানায় মামলা করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। মামলার আসামিরা হলেন- বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লিমিটেডের (ফেডেক্স) এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর (অর্থ) খন্দকার ইফতেখার উদ্দিন আহমেদ ও সিনিয়র ম্যানেজার (অপারেশন) রাসেল মাহমুদ, ইউনাইটেড এক্সপ্রেসের জেনারেল ম্যানেজার গাজী শামসুল আলম, এক্সপোর্ট কার্গোর ভেতরে এমজিএইচ গ্রুপের লোডিং সুপারভাইজার কাজল থুটোকিশ গোমেজ, কার্গো হেলপার/লোডার মো. হামিদুল ইসলাম ও মো. নজরুল ইসলাম।
এ নিয়ে গতকাল দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রপ্তানি কার্গো ভিলেজে কাস্টমস বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধির উপিস্থিতিতে তৈরি পোশাকের প্যাকেট থেকে ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম সন্দেহজনক দ্রব্য উদ্ধার করে। ৩৪০ কার্টন পণ্যের মধ্যে ৭টিতে জিন্সের প্যান্টের আড়ালে এগুলো পাচার করা হচ্ছিল। এগুলো ছিল ১৪টি বড় ও ১৪টি ছোট প্যাকেটে। এসব প্যাকেট কার্বনের লেয়ার দ্বারা প্রস্তুত পাতলা অ্যালুমিনিয়ামের। পরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারে নমুনা টেস্ট করে এতে অ্যামফিটামিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়, যা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮-এর ‘ক’ তফশিলভুক্ত মাদক।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, জব্দকৃত অ্যামফিটামিন পাউডারের আনুমানিক মূল্য প্রতি কেজি দুই কোটি টাকা। সেই হিসাবে জব্দ ১২ কেজি ৩২০ গ্রাম অ্যামফিটামিন পাউডারের মূল্য প্রায় ২৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, নেপচুন ফ্রেইট লিমিটেডের উত্তরার আশকোনায় একটি অফিস রয়েছে এবং ওই অফিসের রুবেল হোসেন নামের এক ব্যক্তি ওই সাত কার্টনে তৈরি পোশাক-জিন্সের প্যান্ট অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর জন্য ইউনাইটেড এক্সপ্রেস লিমিটেডে বুকিং দিয়ে যায়। বনানীর ইউনাইটেড ফ্রেইটের পরামর্শক্রমে ইউনাইটেড এক্সপ্রেস লিমিটেড প্রথমবারের মতো নেপচুন ফ্রেইট লিমিটেডের ওই সাতটি কার্টন গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ইউনাইটেড এক্সপ্রেস কার্টনগুলো বাংলাদেশ এক্সপ্রেস লিমিটেডে (ফেডেক্স) প্রেরণ করে। ফেডেক্স তার হাবে সংরক্ষণ করে ও যথাসময়ে কার্গো ভিলেজে পাঠায়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক পাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, আমরা বাংলাদেশে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর ওপর নজরদারি রাখছি। কেউ যাতে কোনোভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসকে ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্যের আড়ালে মাদকের চোরাচালান করতে না পারেন।