বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে এই পৃথিবী। খেতে ফসল নেই। শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার উপযুক্ত হাওয়া নেই। তাই ভিন্ গ্রহে ‘উপনিবেশ’ গড়ার খোঁজে পৃথিবী ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিল এক দল নভশ্চর। খুঁজেও পেয়েছিল। বছরখানেক আগে মুক্তি পাওয়া ক্রিস্টোফার নোলান পরিচালিত ‘ইন্টারস্টেলার’ ছবিটি দর্শককে নিয়ে গিয়েছিল এ রকমই এক কল্পবিজ্ঞানের জগতে।
পৃথিবীর বাইরে ঘর বাধার স্বপ্ন মানুষের অনেক দিনের। সেই স্বপ্নকে সত্যি করে তুলতে মহাকাশে ফোটাচ্ছে ফুলও। কিন্তু একই সঙ্গে চলছে উল্টো দৌড়। নানা ভাবে বিপন্ন করে তোলা হচ্ছে পৃথিবীকে। এই পথ থেকে সরে না এলে ভিন্গ্রহে বসত গড়ার আগেই হয়তো পৃথিবীতে মুছে যাবে মানুষের অস্তিত্ব, হুঁশিয়ার করলেন বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। আজ বিবিসির ‘রিথ বক্তৃতা’ দেওয়ার আগে তিনি মনে করিয়ে দিলেন, ‘‘অন্য কোনও গ্রহে উপনিবেশ গড়ে তুলতে অন্তত একশো বছর লেগে যাবে। তত দিন অন্তত পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য করে রাখি আমরা।’’ কী ভাবে তা সম্ভব, তার দাওয়াইও দিলেন তিনি। হকিংয়ের কথায়, ‘‘পৃথিবীর বিপদগুলিকে চিনে নিয়ে তাতে লাগাম টানতে হবে।’’
বিপদগুলি কী?
পরমাণু যুদ্ধ, পরিবেশ দূষণ, উষ্ণায়ন, জিন বদলানো ভাইরাস— তালিকাটি দীর্ঘ। হকিংয়ের বক্তব্য, একের পর এক দেশ তাদের অস্ত্রভাণ্ডারে মজুত করছে পরমাণু বোমা। বেহিসেবি জীবনযাপনের জন্য বেড়ে চলেছে জ্বালানি খরচ। যা বিষ ছড়াচ্ছে পরিবেশে। উন্নত দেশগুলির গবেষণাগারে গোপনে হয়ে চলেছে একের পর এক পরীক্ষা, রাসায়নিক বিক্রিয়া। যা জন্ম দিচ্ছে কালান্তক ভাইরাসের। আর এই সবই ছায়া ফেলছে মানবজাতির আয়ুতে।
তাহলে মানবজাতিকে এর থেকে বাঁচানোর উপায়? বিজ্ঞানী হিসেবেই তিনি সাবধান করে দিয়েছেন বি়জ্ঞান গবেষণার ফলে ঘনিয়ে আসা সর্বনাশ নিয়ে। হকিংয়ের বক্তব্য, বি়জ্ঞান গবেষণাকে মুক্ত করতে হবে। সবার অগোচরে আর গবেষণা নয় নয়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা গবেষণা যা চলছে, তা জানাতে হবে সকলকে। বোঝাতে হবে মানুষকে।
কৃত্রিম ভাইরাস, বুদ্ধিমান কম্পিউটার কিংবা বিশ্ব উষ্ণায়ন যে সেই সব বিপদের নমুনা, তা তিনি বলে আসছেন দীর্ঘদিন ধরেই। আজও তিনি বলেন, ‘‘এক বছরের মাপকাঠিতে হয়তো এই বিপদের মাত্রা হিসেব করা যাবে না। কিন্তু একসঙ্গে অনেকগুলো বছর— হাজার কিংবা দশ হাজার বছরে— বিপদ প্রায় নিশ্চিত। তার আগে যদি মানুষ অন্য কোনও গ্রহে উপনিবেশ গড়ে তুলতে পারে, চলে যেতে পারে অন্য কোনও নক্ষত্রের আশপাশে, তা হলে হয়তো পৃথিবীতে সর্বনাশ ঘনিয়ে এলেও মহাবিশ্ব থেকে মানুষ নিশ্চিহ্ন হবে না।’’
তবে এখনই আস্থা হারাচ্ছেন না কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিজ্ঞানী। এক দিকে যেমন তিনি দেখতে পাচ্ছেন, পৃথিবীর বিকল্প না খুঁজে পেলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে মানুষ, তেমনি তাঁর বিশ্বাস, মানুষই পারবে এই বিপদ নিয়ন্ত্রণ করতে। তাই যাঁরা বি়জ্ঞানী হতে চান, তাঁদের জন্য হকিংয়ের পরামর্শ, গবেষণা কোন পথে এগিয়ে চলেছে তা জনসাধারণকে জানানোর দায়িত্ব তাঁদেরই নিতে হবে। এটাও দেখতে হবে যে, গবেষণার অগ্রগতি যেন ঠিক পথে এগোয়। গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় যদি সকলের বিজ্ঞান সম্পর্কে সাধারণ ধারণা থাকে তবেই তা সম্ভব।
বিজ্ঞানীদের হকিংয়ের তাই পরামর্শ, ‘‘জনগণকে সোজা ভাষায় জানান, আপনি কী করতে চাইছেন, কে জানে, এর ফলে আপনিই হয়তো ভাল করে চিনবেন নিজেকে।’’