রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এক জীবনে কোনো ব্যক্তি এত প্রতারণা করতে পারে তা অবিশ্বাস্য! বহুরূপী শাহেদ তার সাম্রাজ্য শাসনে ব্যবহার করেছেন সুন্দরী নারীদেরও।
শাহেদের রক্ষিতা হিসেবে কাজ করে এমন পাঁচজন সুন্দরী নারীর তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। এর মধ্যে তিনটি নাম ঘুরে ফিরে উঠে আসছে। তারা হলেন- তরুণী লিজা, সাদিয়া ও হিরা মণি।
শনিবার (১১ জুলাই) দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে। খবরে বলা হয়েছে, বিভিন্ন প্রতারণায় শাহেদ করিম সুন্দরী তরুণীদের ব্যবহার করত। শাহেদ তরুণীদের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে কাজ বাগিয়ে নিত। অনেক সময় সরবরাহকারীদের দিয়ে কাজ করিয়ে বিল দিতেন না।
লিজা, সাদিয়া ও হিরা মণির মতো অন্তত চার-পাঁচ তরুণী শাহেদের হয়ে কাজ করত। এমন অভিযোগের বিষয়ে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এ ধরনের অভিযোগ আমরাও পেয়েছি।
এদিকে, শাহেদের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগীরা। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অফিস দখলে রাখা, আর মাসের পর মাস ভাড়া বকেয়া রাখার অভিযোগ রয়েছে রিজেন্ট গ্রুপের বিরুদ্ধে। মিরপুরে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে এখনো অর্ধকোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি ভবন মালিকের। আর উত্তরায় রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ের ভাড়া বকেয়া রয়েছে ৮ মাসের।
উত্তরা শাখা সিলগালা করে দেয়ার পর রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর শাখাও এখন বন্ধ। হাসপাতাল ভবনের নিচতলায় ঝুলছে তালা। চলে গেছেন রোগীরা। শাখার প্রধান নির্বাহী রাশেদসহ অন্য কর্মকর্তারাও হাসপাতাল থেকে লাপাত্তা।
এদিকে, উত্তরায় রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান কার্যালয় ভাড়া নেয়ার ক্ষেত্রে নাম ভাঙান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের। নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল হিসেবে পরিচয় দেন মোহাম্মদ শাহেদ, এমন অভিযোগ ভবন মালিকের।
জানান, চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও দখলে রেখেছে রিজেন্ট গ্রুপ। বকেয়া রয়েছে ৮ মাসের ভাড়া। টাকা চাইলে দেয়া হতো হুমকি।
বাড়ির মালিক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অফিসের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়েছেন। এবং উনি যখন আসে তখন সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে কয়েকজন থাকে।
সম্প্রতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দেয়া রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. শাহেদের বাবা সিরাজুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) রাতে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তবে বাবার মরদেহ নিতে যাননি শাহেদ কিংবা পরিবারের কেউ।
ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ৪ জুলাই সিরাজুল ইসলামকে আমাদের এখানে ভর্তি করান শাহেদ। তখন আমাদের বলা হয়েছিল তার করোনা নেগেটিভ। কিন্তু লক্ষণ থাকায় আমরা পরীক্ষা করে পজিটিভ পাই। শাহেদের বাবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রাখা হয়। তার নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য জটিলতা ছিল।
ডা. আশীষ কুমার আরও বলেন, শাহেদকে আমি বলেছিলাম, যেহেতু আপনার হাসপাতাল কোভিড ডেডিকেটেড, তাই রিজেন্টে নিয়ে যান। তখন তিনি তার হাসপাতালে কোনও সার্ভিস না থাকার কথা জানান।
এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শাহেদের স্ত্রীর ফোন নম্বরে মারা যাওয়ার খবর জানান। পরে দুজন ব্যক্তি এসে মৃতদেহ নিয়ে যান। দুজনের কেউই তাদের পরিবারের সদস্য নন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শাহেদ বা তার প্রতিষ্ঠানের কাউকে খুঁজে না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে। সমস্যা এড়াতে তারা জিডি করেছে।
এ বিষয়ে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, আমরা শুরুতে ভুয়া টেস্টের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি। কিন্তু এখন দিন যতই যাচ্ছে দেখছি অসংখ্য জঘন্য অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল শাহেদ। যাদের সঙ্গে তার ব্যবসা ছিল, তাদের সঙ্গেই প্রতারণা করেছে। অভিযানের পর অসংখ্য মানুষ আমাকে কল করে তার প্রতারণার ফিরিস্তি তুলে ধরছে। পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তার থেকে পদ্মাসেতু প্রকল্পের জন্য নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে সাপ্লাই দিয়ে আর টাকা দেয়নি। সিলেটের জৈন্তাপুর থেকে একজন কল করে জানিয়েছে, তার থেকে বালু এনে সাপ্লাই দিয়ে সে টাকা আর পরিশোধ করেনি। এছাড়া বিভিন্ন নিয়োগ ও বদলির কথা বলে কোটি কোটি টাকা সে হাতিয়ে নিয়েছে। অবাক করা বিষয় হল পুলিশের এসপি পদমর্যাদার একটি বদলির জন্যও সে প্রতারণা করেছে।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সফিউল্লাহ বুলবুল গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা সাধারণত এ ধরনের অভিযান পরিচালনার আগে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের বিষয়ে গোয়েন্দা তদন্ত করি। এই অভিযানের আগেও আমরা টানা চার-পাঁচদিন তদন্ত করেছি। আমাদের কাছে অভিযোগ ছিল, হাসপাতালটিতে পিসিআর মেশিন না থাকার পরেও টেস্ট করে রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে। বিনিময়ে নেয়া হচ্ছে টাকা। এরপর কিছু ভুয়া পরীক্ষার প্রমাণ আমরা পাই। কিছু সার্টিফিকেট আমাদের হাতে আসে সেগুলো আইইডিসিআরের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। কিন্তু সেখানে এসব রিপোর্টের কোনো মিল পাওয়া যায়নি। মূলত এ দু’টি অভিযোগ নিয়ে অভিযান পরিচালনা করলেও পরে তার প্রতারণা দেখে বিস্মিত হই।