বাবা ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হওয়ার কারণে কারাগারে প্রাণ দিতে হলো ঘাতকের বুলেটে। আর সন্তানও ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আস্থাভাজন। ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বিভিন্ন আন্দোলনে রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পিতার মতো তিনিও দেশের রাজনীতিতে একজন উজ্জল নক্ষত্র।
বলছি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় নেতা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন শহীদ এম মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিমের কথা। ছাত্রজীবন থেকে গণমানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন মোহাম্মদ নাসিম। নিজের ছাত্র রাজনীতির সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, বুঝে অথবা না বুঝে যে কারণেই হোক আমি তখন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করতাম। ১৯৬৭ বা ৬৮ সালে পাবনায় এক জনসভা শেষে বঙ্গবন্ধু আমাদের বাসায় আসলেন। খাওয়া-দাওয়ার এক পর্যায়ে আমাকে খুঁজলেন, বললেন-‘নাসিম কোথায়? আমি ভয়ে ভয়ে তার কাছে গিয়ে দাঁড়াই। তখন তিনি অত্যন্ত স্নেহ করে আমার কান ধরে বললেন, ‘তুই মনসুর আলীর ছেলে হয়ে ছাত্র ইউনিয়ন করিস।’ আমি ভয়ে ভয়ে বললাম- চাচা, আমি এখন থেকেই ছাত্রলীগ করব। এরপর আমি ছাত্রলীগ করি। যুবলীগ করেছি। এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে যাচ্ছি।
ছাত্ররাজনীতি ছাড়ার পরে যুবলীগের রাজনীতি করলেও ১৯৮১ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন মোহাম্মদ নাসিম। ওই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে তিনি দলের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন।
২০০২ সালের সম্মেলনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ ছিলো একটি। আর ওই সম্মেলনে বিভাগওয়ারী সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগে ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসিমকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ দায়িত্ব পালনে তিনি দক্ষতার পরিচয় দেন।
পরে ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে তাকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। এরপর ২০১২ সালের সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এরপর টানা তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন।
রাজনৈতিক মাঠে সুবক্তা হিসাবে পরিচিত মোহাম্মদ নাসিম ভোটের রাজনীতিতেও সফল হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জ- ১ সংসদীয় আসন (কাজীপুর) থেকে পাঁচবার বিজয়ী হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে তাকে স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়।
২০১৪ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ১/১১ সরকারের দেওয়া মামলার কারণে অংশগ্রহণ করতে পারেন নি। ওই নির্বাচনে তার সন্তান তানভীর শাকিল জয়কে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিমকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। বিজয়ী সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, রাজনৈতিক জীবনে রাজপথে সবসময়ই সক্রিয় ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। সরকার বিরোধী আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন সময় নির্যাতন সইতে হয়েছে তাকে। রোষানলের শিকার হয়েছিলেন ১/১১ সরকারেরও। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও জাতির জনকের রাজনীতির প্রশ্নে তিনি ছিলেন সবসময়ই আপোষহীন। রাজনৈতিক দুরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার কারণে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আস্থাভাজন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নয় দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। শ্বাসকষ্ট নিয়ে বাংলাদেশ স্পেশালাজড হাসপাতালে ভর্তির পর করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে তার। এরপর তিনি ব্রেন স্ট্রোক করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. রাজিউল হকের নেতৃত্বে অপারেশন হয়। তার চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডাক্তার কনক কান্তি বড়ুয়ার নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। পরে নেয়া হয় ডিপ কোমায়। ডাক্তারদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে আজ শনিবার সকালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বর্ষীয়ান এই রাজনীতিক।