ডেস্ক : বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যাও। এখন পর্যন্ত ৪৭ লাখ লোকের করোনা শনাক্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ১৩ হাজারের বেশি মানুষের। এ অবস্থায় করোনার ওষুধ তৈরিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের শতাধিক প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে এগিয়ে আছে ৯টি প্রতিষ্ঠান। চূড়ান্ত ট্রায়াল শেষ হলেই এসব ওষুধ যেকোন সময় বাজারে ছাড়ার অপেক্ষায়ও রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান আধানম ঘেব্রেয়েসুস জানিয়েছেন, করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে সবার চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে ৭ বা ৮টি প্রতিষ্ঠান। তাদের মধ্যে যে কেউই আগে করোনার ভ্যাকসিন বাজারে আনতে পারবে।
চলুন সেসব প্রতিষ্ঠান ও তাদের ভ্যাকসিনের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জেনে নিই:
মোদারনা ভ্যাকসিন
মার্কিন-ভিত্তিক মোদারনা থেরাপিউটিকস বলেছে যে, এটি সম্ভাব্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত ক্লিনিকাল ট্রায়াল পরিচালনার জন্য এফডিএ (ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) এর কাছ থেকে অনুমোদন পেয়েছে। ইতিমধ্যে ওয়াশিংটনের সিয়াটলে তার ভ্যাকসিন এমআরএনএ-১২৭৩ এর প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল পরিচালিত হয়েছে। আরএনএ ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে ৪৫ জন স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবীর উপর পরীক্ষা করা হয়েছে।, যাদের ২৮ দিনের ব্যবধানে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছিল।
এই ভ্যাকসিনটি মানুষের কোষের জন্য আণবিক নির্দেশনা বহন করে এবং ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার জন্য শরীরে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
এটি দ্বিতীয় ধাপে ৬০০ ব্যক্তির ওপর পরীক্ষা করা হবে। তাদেরকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ভাগের বয়স ১৮ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে এবং দ্বিতীয় ভাগের বয়স ৫৫ বছরের ওপরে।
নোভাভ্যাক্স ভ্যাকসিন
কোভিড-১৯ এর সম্ভাব্য ভ্যাকসিন প্রস্তুতের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে মার্কিন কোম্পানি নোভাভ্যক্স ইনক। সম্পত্রি তারা মহামারির বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরিতে ৩৮৮ মিলিয়ন ডলারের তহবিল পেয়েছে। নোভাভ্যাক্সের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের প্রেসিডেন্ট ডা. গ্রেগরি গ্লেনের মতে, ভ্যাকসিন এনভিএক্স-কোভ২৩৭৩ আশাব্যঞ্জক ফলাফল দেখিয়েছে। বায়োটেক সংস্থা অস্ট্রেলিয়া থেকে ১৩০ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর মানবিক পরীক্ষা পরিচালনা করবে। এরই মধ্যে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফল পাওয়া গিয়েছে।
ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালস
মার্কিন কোম্পানি ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালস তাদের সান দিয়াগো ল্যাবে একটি ডিএনএ ভিত্তিক ভ্যাকসিন তৈরি করছে। জৈব প্রযুক্তি সংস্থা কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেইডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই) থেকে ৬.৯ মিলিয়ন ডলার অর্থ পেয়েছে তারা। প্লাইমাউথ সভা-ভিত্তিক বায়োফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা ৪০ স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর ক্লিনিকাল ট্রায়ালের প্রথম ধাপটি সম্পন্ন করেছে।
ভ্যাকসিন তৈরি শুরুর ৮৩ দিনের মধ্যে প্রথম ট্রায়ালটি সম্পন্ন করেছে তারা। পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপটি মে মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু করবে তারা। এই ধাপের পরীক্ষায় ৪০ জনের ওপর ভ্যাকসিন আইএনও-৪৮০০ প্রয়োগ করা হবে। এই পরীক্ষার ফলাফল জুনের শেষ নাগাদ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে এই কোম্পানি।
ফাইজার এবং বিএনটিইসিএইচ ভ্যাকসিন
মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী ফিজার কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরি করতে জার্মান সংস্থা বিএনটিইসিএইচ এর সঙ্গে কাজ করেছেন। দুটি সংস্থাই চারটি আরএনএ ভ্যাকসিনের পরীক্ষা করছে। তাদের ভ্যাকসিন বিএনটি১৬২ এমআরএনএ প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এরই মধ্যে জার্মানিতে এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। চারটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন ৩৬০ জনের ওপর বিভিন্ন ডোজে প্রয়োগ করা হবে।
জনসন এবং জনসন ভ্যাকসিন
সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তৈরিতে সফল হওয়ার পথে জনসন এন্ড জনসন। তারা অ্যাডেনোভাইরাস ভিত্তিক ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে এবং ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম ধাপের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পরিকল্পনা করছে। সংস্থাটি এক বিলিয়ন ডোজ উৎপাদনের জন্য এরই মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়েছে। ভ্যাকসিন অনুমোদন হলে ২০২১ সালের শেষের দিকে সম্ভাব্য ভ্যাকসিন বাজারে আনতে পারবে বলে জানিয়েছে তারা। এবং এই ভ্যাকসিন ২০২১ সালের প্রথম দিকে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহার করা যাবে বলেও আশা করছে জনসন এন্ড জনসন।
ক্যানসিনো বায়োলজিক্স
চীনা ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী ক্যানসিনো বায়োলজিকস ইনক কোভিড-১৯ এর জন্য একটি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তৈরি করছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে এগিয়ে থাকা ভ্যাকসিন হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছে। সংস্থাটি বর্তমানে ভ্যাকসিনটি বিকাশের জন্য একটি অ-প্রতিলিপি ভাইরাল ভেক্টর প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অ্যাডেনোভাইরাস টাইপ৫ ভেক্টরটিতে কাজ করছে। অ্যাড৫-এনসিওভি ভ্যাকসিনের পরীক্ষা এপ্রিলে শুরু হয়েছে এবং ডিসেম্বরে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ক্যানসিনো বায়োলজিক্স ইতিমধ্যে ইবোলার একটি ভ্যাকসিন তৈরি করেছে।
সিনোভাক বায়োটেক
বেইজিংভিত্তিক সিনোভাক বায়োটেক কোভিড-১৯ রোগের জন্য ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছে। তারা ইতিমধ্যে প্রথম পর্বের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এর আগে প্রাণীর ওপর পরীক্ষায় ভ্যাকসিন সফল হয়েছে বলে জানায় কোম্পানিটি।
সংস্থাটি তাদের সম্ভাব্য ভ্যাকসিনের দুটি ভিন্ন ডোজ আটটি বানরের ওপর প্রয়োগ করেছিল। তাদের মধ্যে চারটি ভ্যাকসিনের উচ্চ মাত্রা দেওয়া হয়েছিল এবং অন্য চারটি কম ডোজ দেওয়া হয়েছিল। উচ্চ পরিমাণে ডোজ প্রাপ্ত বানরগুলো কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষিত ছিল এবং তাদের ফুসফুসে ভাইরাস চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে মিলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় একটি সম্ভাব্য করোনভাইরাস ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনার ইনস্টিটিউট ভ্যাকসিনটিকে কাজ করতে বিজ্ঞানীরা সাধারণ কোল্ড ভাইরাস (অ্যাডেনোভাইরাস) এর দুর্বল স্ট্রেন ব্যবহার করেছিলেন যা শিম্পাঞ্জিতে সংক্রমণ ঘটায়।
ইতিমধ্যে এই ভ্যাকসিন বানরের ওপর সফল হয়েছে এবং মানুষের ওপর ট্রায়াল দেয়া হয়েছে।
সানোফি ভ্যাকসিন
ফরাসি ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ সানোফি সম্প্রতি জানিয়েছে তারা ভ্যাকসিন তৈরিতে অনেকটা পথ এগিয়ে গিয়েছে এবং উৎপাদনের পর ভ্যাকসিনের প্রথম চালানটি যুক্তরাষ্ট্রকে দেয়া হবে। এরপর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে তারা জানিয়েছে বিশ্বের সকল জাতিকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে তারা।
মার্কিন কোম্পানি গ্লাক্সো স্মিথলাইন প্লাকের সঙ্গে মিলে ভ্যাকসিন তৈরি করছে সানোফি। তারা জানিয়েছে ২০২০ সালের মধ্যে দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষা সম্পন্ন হবে এবং ২০২১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এই ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যাবে।