সাংবাদিকতায় রাজনীতি ঢুকে পড়ায় গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে। গণতন্ত্রের` দেশে `আস্থাহীনতায়` সাংবাদিকতা যেন ভর করছে গোটা সমাজ ব্যবস্থায়।সাংবাদিকদের মাথায় যখন রাজনীতির ভূত চাপে তখন ঐ সাংবাদিক আর সাংবাদিক থাকে না। ঐ পত্রিকা বা মিডিয়া আর মিডিয়া থাকে না। বস্তু নিষ্ঠা সংবাদ প্রকাশে হয়ে যায় এক চোখা। হয়তো এখন অনেক সাংবাদিক নিজেকে বাঁচাতে রাজনীতির ছত্রছায়ায় সাংবাদিকতা করছে বা অনেক রাজনীতি নেতৃবৃন্দ নিজেকে রক্ষা করতে সাংবাদিকতা করছে। এখন অনেক সাংবাদিক বা পত্রিকা ও মিডিয়া রাজনৈতিক নেতাদের মন যোগাতে ব্যস্তসময় পার করে। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসবে ততই এ ধরনের সাংবাদিকতা বাড়বে। কিন্ত এটা কোন আদর্শ সাংবাদিকতা বা সংবাদ মাধ্যম হতে পারে না। মাথার মধ্যে গিজগিজ করা ‘রাজনীতি’নিয়ে সুষ্ঠ ধারার সাংবাদিকতা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। শুধু রানীতির সাথে সাংবাদিকতাকে মিলিয়ে ফেলায় প্রতিনিয়ত সাংবাদিক হয়রানী বা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মামলা হামলার শিকার হচ্ছে। রাজনীতির সাথে গুলিয়ে ফেলা সাংবাদিক সবসময় নিউজ কোনদিকে নেবেন, তা নিয়ে টেনশনে থাকেন। তার নেতাদের হাবভাব বুঝে সংবাদ প্রকাশ করার কথাও ভাবতে কঠিন বিপদের আর শেষ থাকে না। সামনে জাতিয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে এ পরিস্থিতির ভয়াভয় আরো বেড়েছে অনেক গুন। হয়তো আমরা এখনো রাজনৈতিক সাংবাদিকতার ঘেরাটোপেই বন্দি আছি। এক্ষেত্রে সাংবাদিক কিংবা সংবাদকর্মী অনেক কথাই শুনতে হচ্ছে । বিতর্কের মধ্যে পড়ছে অনেক সাংবাদিক। আর গোটা কয়েক এ ধরনের সাংবাদিকদের জন্য পুরো সাংবাদিক সমাজ হচ্ছে প্রশ্নবৃদ্ধ। মূলত বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা এখন শেষের দ্বার প্রান্তে বলে মনে করেন সাধারন পাঠকরা। সবসময় রাজনৈতিক চাপে গণমাধ্যম আদর্শগত ভূমিকা পালন করতে বাধাগ্রস্থ্য হয়ে আসছে। তবে আমাদের গণমাধ্যম প্রতিনিয়ত ব্যস্ত থাকছে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজন, প্রতিহিংসা, শত্রু-শত্রু খেলা, পারস্পরিক শক্তির চ্যালেঞ্জ, রাজনীতির মেরুকরণ প্রক্রিয়ার প্রবাহমান ঘটনায়। আমাদের গণমাধ্যম রাজনৈতিক বলিতে পরিনত হচ্ছে মবসময়। কারণ রাজনীতির ইতিহাস নৃশংসতা আর রক্তে ভেজা। সমাধানহীন অবিশ্বাস, ঘৃণা, ভয় আর জিঘাংসায় জর্জরিত। যার প্রভাব গণমাধ্যমে পড়ছে। ফলে জনস্বার্থ উপেক্ষিত রেখে পক্ষে-প্রতিপক্ষে অবস্থান নিতে হয় সাংবাদিকদের। এতে বিশ্বাস আর জনপ্রিয়তা হারিয়ে গণমাধ্যম হয়ে উঠেছে ‘পলিটিকেল বিজনেস’ আর করপোরেট স্বার্থের পাহারাদার। তখন প্রকৃত সাংবাদিকতা চলে যায় লাইফ সার্পোটে। বর্তমানে দেশের অসংখ্য গণমাধ্যম বেড়ে গেছে রাজনৈতিক প্রবণতায় ও ছত্রছায়ায় । অনেক রাজনীতিবিদ রাজনীতিকে ধরে রাখতে সংবাদমাধ্য বা সাংবাদিকতাকে ব্যবহার করছে। পাশাপাশি রাজনীতিবিদ হতে চাইছেন সাংবাদিক। আর এ উল্টোদিকের সাংবাদিকতা প্রকৃত সাংবাদিকতাকে যাতা কলে পিষে দিচ্ছে। কথিত এ সব সাংবাদিক কখনো খবর পড়েনা, খবর দেখেনা, খবর লিখেনা কারন তারা নিজেরাই এক একটি খবর। তাদের কাছে একাধিক বা ততোধিক প্রেস আইডি কার্ড থাকে, তারা একইসাথে অনেকগুলো মিডিয়ায় কাজ করে। তারা অর্থের বিনিময়ে সব ম্যানেজ করে। তারা একাধারে কোথাও সম্পাদক, কোথাও প্রকাশক, কোথাও চীফ রিপোর্টার আবার কোথাওবা ষ্টাফ রিপোর্টার। অনেক সময় বড় রাজনৈতিক নেতা পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকতাকে সাংঘাতিকে পরিনত করছে। এখন জাতিয় নির্বাচন কে সামনে রেখে এটা অনেক গুন বেড়েছে। অনেক রাজনীতিবিদ সাংবাদিক নিজের সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠেছে । তাদের গণমাধ্যমে তাদের দলীয় খবর ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। এটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? কোথায় বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার সমাপ্তি হচ্ছে আর রাজনৈতিক সাংবাদিকতার শুরু হচ্ছে তা ভেবে দেখার দায়দায়ীত্ব এখন পাঠকের বা জনসাধারনের উপর ন্যাস্ত। এখন মানুষ পত্রপত্রিকা পড়ে বা মিডিযা দেখে দল দেখে। সাংবাদিকতায় পেশাগত বিচ্যুতির যে প্রবণতা শুরু হয়েছে তা এক রুগ্ন বাস্তবতা তৈরি করছে। আজ সাংবাদিকতার অনুসরণীয় নীতিমালা সমুন্নত রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। সরকার গঠনের মাধ্যমে দেশের মূল ক্ষমতা নিয়ন্ত্রন করে রাজনীতিবিদরাই। তবে ক্ষমতার আরেকটি অন্যতম সাইট হচ্ছে গণমাধ্যম। যোগ্যতার ভিত্তিতে পেশাদার সাংবাদিকরা সবসময় রাজনীতিবিদ সহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে বিশেষ মূল্যায়ন পেয়ে থাকে। নিজ বা দলীয় স্বার্থে একমাত্র রাজনীতিবিদরাই তাদের এই বিশেষ মূল্যায়নকে কাজে লাগিয়ে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তারা সফল । অধিকাংশ রাজনীতিবিদরা একইসাথে এক বা একাধিক গণমাধ্যমের মালিক থাকে তারা এ ব্যাপারে শতভাগ সফল হয়ে থাকে। পেশাদার সাংবাদিকরা সৎ ও নির্ভীক থাকায় তারা অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই দূর্বল থাকে বিধায় রাজনীতিবিদরা খুব সহজেই এদের দূর্বলতাকে ব্যবহার করতে পারে কারন চাকরী বাঁচানোর তরে তারা রাজনীতিবিদদের কাছে ধরাশায়ী থাকে। জৈবিক হয়রানি হওয়া স্বত্বেও এখনও অনেক পেশাদার সাংবাদিকগণ নীতির সঙ্গে আপোষ না করে নিজেদের বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখেছেন ঠিকই কিন্তু বর্তমানে অনেক পেশাদার সাংবাদিক আরও নীতি যোগ করে অতিনীতিবান হয়ে সরাসরি চলে যাচ্ছেন রাজনীতিবিদদের ছায়াতলে। সময়মত বেতনভাতা না পাওয়ায় তারা নিজ নিজ হাউসে চাকরীর পাশাপাশি কমার্শিয়ালি বিভিন্ন নেতাদের গণমাধ্যম বিষয়ক বিভিন্ন ব্যক্তিগত কাজ করে দিচ্ছেন, এমনকি দলীয় পদপদবীও নিচ্ছেন আর নেতাও বনে যাচ্ছেন। নৈতিকতা ও মান সাংবাদিকতার অন্তঃপ্রাণ। কিন্ত বর্তমানে সাংবাদিকতা পরিনত হয়েছে ব্যক্তি, সংস্থা, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনীতিবিদদের অন্তনিহিত হাতিয়ার। এসব গনমাধ্যম জনগণের মতামত ভেঙ্গেচুরে নিজেদের অনুকূলে আনতে হয়, সম্মতি উৎপাদন করতে হয় সেই দীক্ষায়নয়ের কৌশল উপস্থাপন করেন। একটি দেশের সাংবাদিকতা কতটুকু জনকল্যানকর হয়েছে তা বুঝাযায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার দিকে তাকালে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এখন তলানীতে নেমেছে। অনেক সাংবাদিকরা এখন ধান্ধা করার জন্য অনুসন্ধানী করে। প্রকৃতপক্ষে কেউ ঝুঁকি নিতে চান না, ঝামেলায় জড়াতে চান না। সাংবাদিকতা এখন মামার জয়ে পরিনত হয়েছে। পৃথিবীর মহৎ ও সেবামূলক পেশা সাংবাদিকতা। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সগৌর কে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে এসব গোষ্ঠি। সাংবাদিকদের মধ্যে একটি বিভাজন তৈরি হয়ে গেছে। সংবাদপত্রের কর্মী ও সম্পাদকেরা যদি রাজনৈতিক বিভাজনের মধ্যে পড়ে যান, তাহলে সাংবাদিকতার গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। আদর্শিক রাজনীতি করার অধিকার প্রত্যেকের আছে। কিন্তু দলীয় রাজনীতি সবকিছুকে গ্রাস করে ফেলছে। এখন যদি সব সাংবাদিকেরা দলীয় রাজনীতিতে নাম লিখিয়ে ফেলেন, তাহলে সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতা চলে যাবে। ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হবে সাংবাদিকদের জন্য। এজন্য পেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজন। মনে হচ্ছে রাজনৈতিক দলের মতো সাংবাদিকরা বিভাজ। এ কারণে সাংবাদিকদের সকল দাবিগুলো আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। তা হলে সংবাদপত্রও তত বেশি সম্মানের হবে। সাংবাদিকতা তত বেশি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। ইদানীং প্রশাসন থেকে শুরু করে দুর্বৃত্ত সবার প্রতিপক্ষ সাংবাদিক । গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও সরকারের সহযোগিতা না থাকলে সত্যিকারের সাংবাদিকতা করা সম্ভব নয়। সমাজ যেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, সেগুলো ভেঙে পড়েছে। কিসের ওপর দাঁড়িয়ে সাংবাদিকতা চলবে? কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনব্যবস্থা যখন প্রবলভাবে শাসন করে, তখন গণমাধ্যম কীভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করবে? এটা তো সকলে জানেন। গণমাধ্যম এখন নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের সামনে। আমি মনে করি গণতন্ত্র থাকলে সাংবাদিকতার বিকাশ ঘটে, আর সাংবাদিকতা ঠিক থাকলে গণতন্ত্র বিকশিত হয়। এখন সাংবাদিকতা ম্রিয়মাণ রাজনীতির সাথে মিলেমিশে একাকার। ফলে গনমাধ্যম সংকটজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। এখন কারো বিরুদ্ধে যথার্থ সমালোচনা হলেও রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হয়। সেখানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বাস্তবায়ন হবে কি করে। আমার মনে হয় রাজনীতি ও সাংবাদিকতার মধ্যে সম্পর্ক বিপরিত মুখি। রাজনীতিবিদরা প্রচারের জন্য সাংবাদিকদের উপর নির্ভর করে, অন্যদিকে সাংবাদিকরা রাজনীতিবিদ এবং রাজনীতির উপর নির্ভর করে তাদের সংবাদ প্রদানের জন্য। বা অর্থিক সুবিধা আদায়ের জন্য ।তখন সাংবাদিকরা সুনামের ক্ষতি করতে পারে, কখনও কখনও রাজনীতিবিদ বা দলের নির্বাচনী সম্ভাবনার জন্য বিধ্বংসী প্রভাব ফেলে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতিতে নানা ইস্যুতে তর্ক-বিতর্ক ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। রাজনৈতিক সমকনের হিসাব মিলাতে ব্যস্ত জনগন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনর পূর্বমুহুর্তে রাজনীতির সাথে যুক্ত থেকে সাংবাদিকতার নিরেপেক্ষতা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে। অবশ্যই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। সাংবাদিকের কাজ খবর সংগ্রহ করা,নিজে খবরে পরিনত হওয়া নয়। এধরনের পরিস্থিতিতে অবশ্যই এসব সাংবাদিক নিজেই সংবাদে পরিনত হবে। জেল জুলুমের শিকার হবে। মানহীন সাংবাদিকতা সৃষ্টি করবে। আমার দাবী প্রকৃত সাংবাদিকতার সার্থে এসব থেকে আমরা বিরত থাকবো। সংবিধানে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের যে অধিকার দেওয়া আছে, তা বাস্তবায়ন করা সাংবাদিকদের দায়ীত্ব।সেই দায়ীত্ব যথাযথ পালন করবো। সাংবাদিকতার পরিপন্থী বিবেচনা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবো। পরিশেষে বলবো সাংবাদিকতা পেশাটা সত্যিই সেবামূলক পেশায় যেন পরিণত হয় । এ প্রত্যাশায় নতুন সূর্যের অপেক্ষায় থাকলাম। অপসাংবাদিকতা নিপাত যাক ; প্রকৃত সাংবাদিকতার জয় হোক।