বর্তমানে রাজনৈতিক কারনে বা অসমযোতায় সাংবাদিকতা চ্যালেঞ্জ ছাড়া আর কিছুই
নয়। এ পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করতে হয়। ফলে আসন্ন
জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ্ ও পাল্লা
দিয়ে বেড়ে চলেছে। আমরা জানি গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর, সাংবাদিকতা
`পক্ষপাতমূলক` অবস্থান থেকে `নিরপেক্ষতার` দিকে সরে আসে। নির্বাচিত
রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং তারা যে সরকার গঠন করেন, তাদের কাজ দিয়ে বিচার করা
হয়, উদ্দেশ্য দিয়ে নয়, তা যতই ন্যায়নিষ্ঠ হোক না কেন। সবসময় সাংবদিকতার
পেশাদারিত্ব আমাদের বাধ্য করেছে অন্যায়, দুর্নীতি, চাটুকারিতা এবং
রাজনৈতিক দলাদলির বিরুদ্ধে কলম ধরতে। আগে দেশপ্রেম বলতে গণতন্ত্রের পক্ষে
ও সামরিক শাসনের বিপক্ষে সংগ্রাম বোঝানো হতো। বর্তমানে দেশপ্রেমের অর্থ
হচ্ছে অপশাসন, আইনের অপব্যবহার এবং সব ধরনের স্বাধীনতা হরণ, বিশেষ করে
স্বাধীনতার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত বাক স্বাধীনতা হরণের ঘটনাগুলোকে
উন্মোচিত করা। এ ক্ষেত্রে ক্ষমতায় কোন দল রয়েছে, তা বিবেচনায় নেওয়া হয়
না। রাজনৈতিক কারনে সাংবাদিকতায় বিভ্রান্তির সৃষি্ হয়। সাংবাদিকদের
বিভ্রান্তিও সমানভাবে দেশ ও জাতীর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আসন্ন জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে গণমাধ্যম বা সংবাদমাধ্যমের ভুমিকা এবং সাংবাদিকতার
মানদন্ডের যেন ভাটা পড়বে বলে আশংখ্যা অধিকাংশ সাংবাদিকদের। দ্বাদশ জাতীয়
সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র তিন মাস বাকি। তবুও রাজনীতিতে হাওয়া বদলের কোনো
আভাস নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে এখনও আগের অবস্থানেই অনড় আওয়ামী
লীগ ও বিএনপি। একদিকে দেশের বৃহৎ এই দুই রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি
কর্মসূচি। অন্যদিকে নির্বাচন সামনে রেখে ক্রমাগত বিদেশি চাপ। সবমিলিয়ে
দিন যতই যাচ্ছে ততই জটিল হচ্ছে ভোটের রাজনীতি। ফলে সাংবাদিকতার দিক
পরিবর্তন হচ্ছে। বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের
ভূমিকা প্রাথমিকভাবে জনগণের কাছে সঠিক, নিরপেক্ষ এবং সময়োপযোগী তথ্য
সরবরাহ করা উচিত । কিন্ত এটা কতটুকু বাস্তবায়ন হবে সেটা দেখার বিষয়।
এবারের নির্বাচনে সাংবাদিক আর পর্যবেক্ষকদের জন্য নানা ধরনের নিয়ম-নীতি
আরোপ করা হয়েছে৷ সাংবাদিকরা তাই নির্বাচনের খবর সংগ্রহ নিয়ে নানা ধরনের
আশঙ্কায় আছেন৷ বিদেশি পর্যবেক্ষক শেষ পর্যন্ত কতজন আসেন তা-ও বলা যাচ্ছে
না৷ সাংবাদিকদের ওপর সর্বশেষ বিধিনিষেধ, যা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে, তা হলো
নির্বাচনের দিন মোটর বাইক ব্যবহার করা যাবে না৷ এই নির্দেশনা যদি জাতীয়
নির্বাচনে সাধারণভাবে দেয়া হলেও সবচেয়ে কেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন
সাংবাদিকরা৷ কারণ, ফটো সাংবাদিক এবং ঢাকার বাইরের সাংবাদিকরা প্রধানত
মোটর বাইকই ব্যবহার করেন সংবাদ সংগ্রহ এবং চলাচলের জন্য৷ ভোট কেন্দ্রে
লাইভ না করা, একাধিক সাংবাদিক একসঙ্গে প্রবেশ না করা, প্রিজাইডিং
কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করা প্রভৃতি৷ তাহলে কি এ সব
আইনের মধ্যে সাংবাদিকরা সঠিক নিরেপেক্ষ সংবাদ সংগ্রহ করতে পারবে?
সাংবাদিকদের নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করার জন্য
যে প্রেস কার্ড দেয়া হয়, তাতেই জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে৷ এরমধ্যে যেসব শর্ত
দেয়া হয়েছে তার মধ্যে একটি হলো অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড থাকতে হবে৷ কিন্তু
বাংলাদেশে যাঁরা সচিবালয় বিট কাভার করেন, তাঁদেরই কেবল কার্ড দেয়া হয়৷
একজন সাধারন সাংবাদিকের এ কার্ড থাকার প্রশ্ন আসে না। অনলাইন
নিউজপোর্টালের সাংবাদিকরা আরো বেশি ঝামেলার মুখে পড়ছেন৷ এত বিধিনিষেধের
আওতায় সাংবাদিকতা কি সম্ভাব? কখন সাংবাদিক পোলিং সেন্টারে ঢুকবেন তা কে
নির্ধারণ করবেন তারা ? তাহলে ভোটের সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে। আমি মনে করি
সুষ্ঠ নিরেপেক্ষ নির্বাচনের সার্থে সাংবাদিকদের স্বাধীন ভাবে কাজ করতে
দেওয়া উচিত । এদিকে সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই দেশে বা দেশের বাইরে নির্বাচন
নিয়ে আলোচনা বাড়ছে। রাজনৈতিক দলগুলি মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া
বিদেশী চাপ , দ্রব্যের মুল্য উদ্ধগতিতে জনমনে অসন্তোশ বিরাজ করছে।
সবমিলিয়ে দেশে যেন নানাবিধ সমস্যার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এদিকেঅনেকে মনে
করেন, আসন্ন নির্বাচনে পরিবর্তন আনতে পারে হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি৷
তবে তার বিরুপ পতিক্রিয়াও রয়েছে ৷ বিএনপির আন্দোলনে `ভিন্ন মাত্রা` যোগ
করেছে এই ভিসা নীতি। গত কয়েকমাসে বিএনপির নেতারা বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশে
সরকারকে `বিব্রত করতে` একাধিকবার এই ভিসা নীতির উল্লেখ করেছেন।অন্যদিকে
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তাদের পাল্টা কর্মসূচিতে বারবার বলে এসেছে যে
আমেরিকার নিষেধাজ্ঞাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না তারা। এদিকে নির্বাচনের তফসিল
ঘোষণার আগেই যেকোন মূল্যে রাজনৈতিক সংকটের নিষ্পত্তি চাইছে প্রধান দুই
রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। সবকিছু ঠিক থাকলে নভেম্বররেই জাতীয়
নির্বাচনের তফসিল আসতে পারে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়েও
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে বরাবরের মতো বিপরীতমুখী অবস্থান করছে। এ নিয়ে
আওয়ামী লীগে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হলেও বিএনপি বেশ উল্লসিত। এ
পরিস্থিতিতে আগামি দিনের নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে বাংলাদেশকে নিয়ে
যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মনোভাবের দিকে তাকিয়ে রয়েছে দুই দল। এটা একটা
দেশের রাজনীতির জন্য অবশ্যই অশুভ সংকেট। নির্বাচনকে সামনে রেখে পরিস্থিতি
কোনদিকে যায়, সেটি নিয়েও নানা ধরণের জল্পনা আছে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে
প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তার মধ্যেও। এমন বাস্তবতায়, সরকারি দলের বিভিন্ন
পর্যায়ে কৌশল নির্ধারণ ও ভবিষ্যৎ করণীয় কী হবে, সেটি নিয়ে পর্যালোচনা
হচ্ছে। তবে সরকার এসব সমস্যার কথা মাথায় রেখেই যথাসময় নির্বাচন আয়োজন
করার লক্ষ্যে এগুচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার
বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই নিজেদের নির্বাচনী কৌশল ঠিক করছে। বাংলাদেশে ২০১৮
সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ঐ নির্বাচনে
ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ হয়েছিল বলে নির্বাচনের পর অভিযোগ তুলেছিল
বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম আর গণতন্ত্র ও
বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো। এবারের নির্বাচনের আগে
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাজনৈতিক দলের সদস্য ছাড়াও পুলিশ,
প্রশাসন ও সরকারপন্থীদের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে
প্রশাসনের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। তবে এই পরিস্থিতি সরকারকে
বেকায়দায় ফেলেছে বলে মানতে নারাজ সরকারপন্থীরা। তবে এ সব বিষয় যদিও এখনো
গণমাধ্যমে প্রচার অব্যহত রয়েছে। ভিসা নীতি নিয়ে সাংবাদিকদের কি খরনের কাজ
করছে। যুক্তরাষ্ট্র সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে
এবং যারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করতে চায়,
তাদের জন্য মার্কিন ভিসা নীতি প্রয়োগ করবে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ওপরও
মার্কিন ভিসা নীতি প্রয়োগ হতে পারে—ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের
রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের এমন মন্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাকে চিঠি দিয়েছে
সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ। এর জবাবে পিটার হাস
সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার
অধিকার প্রয়োগের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে
বলেছেন, গণমাধ্যমকে কেউ মতামত প্রকাশ করা থেকে বিরত রাখার জন্য কোনো
ব্যবস্থা নিলে তার ক্ষেত্রেও ভিসা নীতি প্রযোজ্য হবে। ইতি মধ্যে
বাংলাদেশের সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যারা বাধা হবে তাদের ব্যাপারে মার্কিন
ভিসা নীতি প্রয়োগ শুরু হয়েছে৷ এরইমধ্যে সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের
সদস্য, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা, বিচার বিভাগ এর
আওয়তায় এসেছে৷এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রসঙ্গে পুলিশ মহাপরিদর্শক
(আইজিপি) আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, `এটা আমাদের ইমেজ সংকটের কারণ হবে
বলে আমি মনে করি না। এছাড়া ওবায়দুল কাদের বলেন, ভিসা নীতি নিয়ে বর্তমান
সরকার পরোয়া করে না। শান্তিপূর্ণ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায়
আওয়ামী লীগ সরকার। অবাধ শান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ নির্বাচন যারা চায়, তাদের
ভিসা নীতি নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। অনেকের মন্তব্যে দেখে আমি মনে করি
ভিসা নীতি কার্যকর প্রাথমিক পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র একটা
মনস্তাত্বিক চাপ সৃষ্টি করছে। তারা নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞায় অভ্যস্ত এবং
নিষেধাজ্ঞাকে তারা বেশ কার্যকর মনে করে। ফলে সামনে তারা তাদের চাওয়া আদায়
করতে আরো চাপ বাড়াবে। সেটা অন্য কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞাও হতে পারে।
বাংলাদেশকে যতক্ষণ পর্যন্ত একটা পরিবেশ সৃষ্টি না হবে তাদের ততক্ষণ
পর্যন্ত তারা নানা ধরনের চাপ বাড়াবে। এখানে শুধু যুক্তরাষ্ট্র একা নয়, এর
সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা আছে। ভিতরের বাইরের
প্রতিক্রিয়াগুলো স্পষ্ট হতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে। আমরা যদি এখন সুষ্ঠু
নির্বাচনের ব্যবস্থা না করি তাহলে এটা আমাদের জন্য জটিলতা আরো বাড়াবে।
কারণ এখানে তো শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, দুইদিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে
তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবেনা। তাদের সঙ্গে পুরো পাশ্চাত্য জগত। এগুলো যদি
আমরা ধর্তব্যের মধ্যে না নিই তাহলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নানা সমস্যা
সৃষ্টি হতে পারে। দেশের মানুষের কষ্ট আরো বাড়বে। তাই নির্বাচনটা
নির্বাচনের মতো হওয়া উচিত। এসব বিষয় নিয়ে এখন গণমাধ্যমের প্যাটার্ন
পরিবর্তন হয়ে গেছে। অনেক ক্ষেত্রে মতবিরোধ প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। তবে
অধিকাংশ সাংবাদিকরা রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে । আগামী
নির্বাচনে সংবাদমাধ্যম গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সাংবাদিকরা
কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে এবিষয়ে দ্বিধাদন্দে রয়েছে। একটু পিছনে ফিরলে
দেখাযায়,২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা সুষ্ঠু ও
অংশহণমূলক নির্বাচনের পক্ষে দৃশ্যত তেমন কার্যকর ছিল না। টেলিভিশন
চ্যানেলগুলো অনেকটা বিটিভির মতো সরকারের প্রচারযন্ত্রে পরিণত হয়েছে।
স্বাধীন সাংবাদিকতা সার্বিকভাবে চাপের মুখে ছিল এমন কথাও বলেছেন সাংবাদিক
নেতৃবৃন্দ। বর্তমানে সাইবার নিরাপত্তা আইন রয়েছে। সাংবাদিকদের এ আইনের
মাধ্যমে একটা গন্ডির মধ্যে পড়েছে। গত এক যুগ ধরে গণমাধ্যম চাপে আছে৷
সরকারে দিক থেকে বাধা আছে, আবার মালিক পক্ষের দিক ধেকেও বাধা আছে৷
মালিকরা তো পার্টিজান হয়ে গেছে৷ এখন সামনের ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচনের জন্য
মিডিয়ার যে ভূমিকা রাখা দরকার, তারা তা পারবে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ
আছে৷ মুক্ত সাংবাদিকতায় বাধা এরশাদের বা তার আগেও ছিল৷ কিন্তু তখন
গণমাধ্যমের মুক্ত সাংবাদিকতার চেষ্টা ছিল৷ এখন চেষ্টাও নেই৷ এর সঙ্গে
নানা আইন তো আছেই৷ সম্পাদকরা এখন রাজনীতিবিদ হয়ে গেছেন৷এছাড়া প্রশাসন
রাজনৈতিক নেতৃত্বের মত আচারন করছেন। এখন সাংবাদিকরাও এখন আর ভালো
প্রতিবেদন না করে কেউ কেউ যোগাযোগের মাধ্যমে অর্থ আয়কেই প্রাধান্য
দিচ্ছেন৷ বেতনের সঙ্গে মিলিয়ে তাদের বিলাসী জীবন দেখলেই বোঝা যায়
সাংবাদিকতা কোন দিকে গেছে৷সাংবাদিকতায় এক শ্রেনীর সাংবাদিকরা চুড়ায় উটেছে
তাদের কোন সমস্যা নেই অপর শ্রেনী তলানীতে ঠেকেছে প্রতিনিয়ত জেল জুলুম ও
নানাবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে কোন রকম দিন যাপন করছে। আমি বিভিন্ন
প্রতিবেদনে দেখেছি জিয়া থেকে এরশাদের সময় সাংবাদিকরা চেষ্টা করেছেন
বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরতে৷ কিন্তু এখন আর সেরকম হয় না৷ গত দুইটি
নির্বাচন নিয়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা সবল নয়৷ সামনের নির্বাচনেও এর পরিবর্তন
হবে বলে আমার মনে হয় না৷ মার্কিন ভিসা নীতিও গণমাধ্যমকে বদলাতে পারবে না৷
কারণ, যারা গণমাধ্যমকে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছেন, তারা অ্যামেরিকায় যাবেন
না৷ তাদের সেই প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না৷ ১৯৯৪ সালে বিএনপির
শাসনামলে মাগুরার উপ-নির্বাচন, এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী
লীগের আন্দোলন৷ ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়রির নির্বাচন এবং ২০০৬ রাষ্ট্রপতি
সালে ইয়াজ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার৷ এই বিষয়গুলো নিয়ে
বেসরকারি গণমাধ্যম সঠিক ভূমিকাই রেখেছিল৷ কিন্তু ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের
নির্বাচন নিয়ে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা সেরকম রাখতে পারেনি৷ বাংলাদেশের
সাংবাদিকরা এখন রাজনৈতিক ভাবেও বিভক্ত৷ তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের
সমর্থক, নেতা হয়ে সাংবাদিকতা করছে৷ রাজনৈতিক আদর্শ গণমাধ্যমের থাকতে পারে
এটা স্বাভাবিক কিন্ত সেটা সাংবাদিকতায় প্রয়োগ করলে হবে না৷ সাংবাদিকরা
রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা এক জিনিস আর বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ খবর পরিবেশন
আরেক জিনিস৷কিন্ত এখন রাজনীতির আর সাংবাদিকতার মিলে শিশে একাকার হয়ে
গেছে৷ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশংসনীয়৷
তখন অবশ্য গণমাধ্যম এত বিস্তৃত ছিল না৷কিন্ত এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে
তারা গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করেছে।গণমাধ্যম একটি রাষ্ট্রের
চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে মিডিয়া উগ্রবাদী শক্তি, জঙ্গি,
যুদ্ধাপরাধী, সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা
পালন করে আসছে। স্বাধীন সাংবাদিকতা অযথা প্রভাব এড়াতে এবং নির্বাচনের
বস্তুনিষ্ঠ কভারেজ প্রদানের জন্য সম্পাদকীয় স্বাধীনতা বজায় রাখা অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। সামগ্রিকভাবে, মিডিয়ার ভূমিকা হলো পর্যবেক্ষণকারী হিসাবে
কাজ করা, নির্ভরযোগ্য তথ্য সরবরাহ করা, রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরিতে
সহযোগতিা করা এবং নির্বাচনের সময় সচেতন পছন্দ করার জন্য নাগরিকদের
ক্ষমতায়ন করা। আমি আশাকরি আগামী নির্বাচন গ্রহনযোগ্যতা হবে এবং
সাংবাদিকরা স্বাধীন ভাবে কাজ করবে।
আওরঙ্গজেব কামাল
লেখক ও গবেষক
|