আওরঙ্গজেব কামাল :
সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকতা কতটুকু গ্রহন যোগ্য
এবিষয়ে হয়তো অনেকে ভাবছেন। বিভিন্ন সংগঠন এ আইনের পরিবর্তন দাবী করেছেন।
আমিও এ আইনের পরিবর্তনের দাবী জানাই। প্রথমে বলবো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের জন্য কতটা করেছেন, তা কারোই অজানা নয়।
সাংবাদিকদের নিয়ে তার চিন্তা চেতনা চিল তা পরবর্তী কোন সরকার বাস্তবয়ন
করেনি। বরং সাংবাদিককে কি ভাবে আটকানো যায় সে চেষ্টা করেছে। আর সেটা এখনো
অব্যহত রযেছে। তার প্রমান সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিতকৃত ধারা।
সাইবার নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ায় সাংবাদিকতায় হতাশা বিরাজ করছে।
সাংবাদিকদের মধ্যে ভয় ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন এর প্রভাবে
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় সমস্যা হবে। পুলিশের সাথে সাংবাদিকদের একটু এদিক
সেদিক হলে তার সাংবাদিকতা হয়তো ঐখানে শেষ হবে। এমন নানাবিধ প্রশ্ন ঘুরপাক
খাচ্ছে পেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে। বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার, সর্বোচ্চ
শাস্তি কোটি টাকা জরিমানা এবং ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয়
সংসদে সাইবার নিরাপত্তা বিল–২০২৩ পাস হয়েছে। আসলে আপনারা একটু ভেবে বলুন
এখানে কি বস্তু নিষ্টা সাংবাদিকতার কোন সুযোগ থাকলো ? বিতর্ক ও সমালোচনার
মুখে পাঁচ বছর পর সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে সাইবার
নিরাপত্তা আইন পাস করলো কিন্ত সেই সাইবার নিরাপত্তা আইন সাংবদিকতায় বড়
বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন অধিকাংশ পেশাজীবী সাংবাদিকরা।
সাংবাদিকদের আপত্তিগুলো উপেক্ষা করে সাইবার নিরাপত্তা বিল পাস করায় এই
আইন স্বাধীন সাংবদিকতা ও মত প্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে
আশঙ্কা করেছেন সংসদে বিরোধী দলের সদস্যরা। এছাড়া সাংবাদিকদের বিভিন্ন
সংগঠনের পাশাপাশি আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীদের অনেকে বলছেন, নতুন আইনে
সাজা কমানো ও জামিনযোগ্য ধারা বাড়ানোর বিষয়টি ইতিবাচক হলেও আইনের সংজ্ঞা
আগের মতোই বহাল রাখায় অপপ্রয়োগ ও অপব্যবহারের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এছাড়া
সবসময় সাংবাদিকরা পুলিশের ঝামেলার মধ্যে থাকবে। এ থেকে স্বাধীন
সাংবাদিকতা হারিয়ে যাবে । প্রকৃত সংবাদ উদঘটন করা সম্ভাব হবে না। এ বিষয়ে
বাংলাদেশ ন্যাশনাল নিউজ ক্লাবের চেয়ারম্যান ইজ্ঞিঃ মোঃ হোসেন ভূইয়া
বলেন,সাইবার নিরাপত্তা আইনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত
দিকনির্দেশনা ও তদারকি নিশ্চিত করা হয়নি, বিষয়টি আগের মতোই অবহেলিত রয়ে
গেছে। এ থেকে সাংবাদিকরা হয়তো কোন সুবিধা পাবে না। তবে সাংবাদিকতা বাধা
গ্রহস্ত হবে। বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও তল্লাশির সুযোগসহ নিপীড়নমূলক সব
ধারা বহাল রেখে এবং অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই মন্ত্রিসভায় এর
অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে অধিকাংশ সাংবাদিক সংগঠন নেতৃবৃন্দের ক্ষোভ
দেখা দিয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ, মতামত ও প্রস্তাবনা
উপেক্ষা করে আইনটির চূড়ান্ত অনুমোদন সরকারের `একগুঁয়ে ও দমনমূলক`
মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে বলে মনে করেন সাংবাদিক নেতারা।
সাংবাদিকদের জন্য এ আইনের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় যে সাব-ইন্সপেক্টর
মর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও তল্লাশির ক্ষমতা
দেওয়া। এ ধারাটি আইনের অপপ্রয়োগের সবচেয়ে ভয়ংকর হাতিয়ার। এটি আইসিটি
অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় ছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আছে, এখন আবার সাইবার
সিকিউরিটি আইনেও রাখা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২৫ (মিথ্যা বা
আপত্তিকর তথ্য প্রকাশ), ধারা ২৯ (মানহানিকর তথ্য প্রকাশ) এবং ধারা ৩১
(আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো বা উস্কানি) সাইবার নিরাপত্তা আইনের
খসড়ায় অবিকৃত রয়েছে। ২৫ ধারায় ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুন্ন’
সংক্রান্ত কোনো ব্যাখ্যা নেই। এসব ধারার যথেচ্ছ অপব্যবহার হতে দেখা গেছে
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। সাইবার আইনেও কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়া এসব
বিধান যুক্ত করা হয়েছে। আমি সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এসব ধারা বাতিলের দাবি
জানাই। অমি দেখেছি এ আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশিরভাগ ধারা হুবহু
থাকা এ আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য থাকছে। অন্য ধারাগুলো জামিনযোগ্য
রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। জামিনযোগ্য করা বা শাস্তি কমানোর মাধ্যমে
পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হবে না। কারণ কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার
করে জামিন না দিয়ে জেলে দীর্ঘ সময় আটকে রাখার অনেক নিকৃষ্ট উদাহরণ রয়েছে।
শুধু পেকেট পরিবর্তন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে দেশি-বিদেশি উদ্বেগ
ও জনগণের ভয়-শঙ্কা কাটবে না। অংশীজনদের প্রত্যাশা নতুন আইনে সম্পূর্ণভাবে
অবজ্ঞা করা হয়েছে। ডিজিটাল আইনের সঙ্গে এর কোনো মৌলিক পার্থক্য এ আইনে
নেই। কিছু ক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ কমানো বা জামিনযোগ্য করা আইওয়াশ এবং
আন্তর্জাতিক মহলকে ধোঁকা দেওয়া ছাড়া আর কিছু না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে
শিশু, কিশোর, নারী, বয়স্ক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের
ওপর সীমাহীন নিপীড়ন চালানো হয়েছে। যে কারণে সংবাদকর্মী থেকে শুরু করে
দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন এমনকি সাধারণ মানুষও ডিজিটাল আইনটি বাতিল
চেয়েছিল। কিন্তু সরকার সাইবার সিকিউরিটি আইন নাম দিয়ে দমন-নিপীড়নের
হাতিয়ারটি একইভাবে রেখে দিয়েছেন । আমরা জানি একটি সাইবার সিকিউরিটি আইনের
লক্ষ্য হচ্ছে ডিজিটাল সিস্টেমস, নেটওয়ার্ক ও তথ্যের নিরাপত্তা প্রদান
এবং অনলাইন হুমকি থেকে দেশ, প্রতিষ্ঠান ও জনগণকে রক্ষা করা। এ আইন
সর্বপ্রথম যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রণীত হয়।
কিন্ত জাতির বিবেক ও রাষ্টের চতুর্থ স্তম্ভ এর বিরুদ্ধে করা কি ঠিক হবে।
আমি মনে করি সরকার চাইলে কোন একটি ধারার মধ্যে সাংবাদিকদের কিছু বিষয়
এড়িয়ে যেতে পারে। পুলিশ যদি সাংবাদিকদের গ্রেফতার করে তাহলে সাংবাদিরা কি
ভাবে তথ্য সংগ্রহ করবে। এমনিতেই প্রতিনিয়ত সাংবাদিক গুম,খুন,মামলা হামলা
ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে ১৫০
জন সাংবাদিক খুন, হামলা, মামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন, হুমকিসহ নানাভাবে
আক্রান্ত ও নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারি ও জুন দু’মাসে খুন
হয়েছেন দুই সাংবাদিক। অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে আরো তিনজনের। মার্চ মাসে
সর্বাধিক সংখ্যক ৪০ জন সাংবাদিক নিপীড়নের মুখে পড়েন। অন্য পাঁচ মাসের
মধ্যে জানুয়ারিতে ১৮, ফেব্রুয়ারিতে ২৫, এপ্রিলে ২৪ এবং মে মাসে ১৪ জন এবং
জুন মাসে ২৯ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হয়েছেন। শীর্ষস্থানীয়
পত্রিকার সম্পাদকসহ ডিজিটাল আইনে হয়রানিমূলক মামলার শিকার হয়েছেন এদের
অনেকে। গ্রেফতার হয়ে জেলও খাটতে হয়েছে সাতজনকে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে
গিয়ে প্রতিনিয়ত নিপীড়ন, গুম, হত্যা ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন
গণমাধ্যমকর্মীরা। এসব হামলা ও নির্যাতনের কোনো প্রতিকার, এমনকি তদন্ত
পর্যন্ত ঠিকমতো হয় না। যার উধারন সাগর রুনী,সাংবাদিকের সাথে হওয়া অপরাধের
তদন্ত, বিচার ইত্যাদি না হওয়াই যেন নিয়ম। সব ক্ষেত্রে একই চিত্র। এ
ক্ষেত্রে স্বাভাবিক প্রশ্ন ওঠে যে, সাংবাদিকমাত্রই কি নির্যাতনযোগ্য? তার
উপর এ আইন মানে সাংবাদিকতা কোথায় গিয়ে দাড়াবে এটা কেহ কি একবার ভেবে
দেখেছেন। সাংবাদিকদের ডাটাবেজ হচ্ছে ,সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আরো দেশে
পূবের প্রচারিত আইন রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তির পরিধি বর্তমানে অত্যন্ত
ব্যাপক। এর নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি ও তার প্রতিরোধের বিভিন্ন দিকগুলো
ধাপে ধাপে উন্মোচিত হয়েছে এবং সে অনুযায়ী একটি দেশে একের অধিক আইনের
প্রয়োজন রয়েছে কিন্ত সেটি কোন গোষ্ঠি কে ধ্বংশ করার জন্য হলে ঠিক হবে
ন্।বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে সাইবার নিরাপত্তা বিল পাস হয়ার পর
পর সাংবাদিকদের মেধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এই বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে
বিরোধী দলের সদস্যরা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে
গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বিতর্কিত জিডিটাল নিরাপত্তা আইনের
বিভিন্ন ধারা এই আইনে যুক্ত করা হয়েছে। এটা অনেকটা নতুন বোতলে পুরনো মদ
রাখার মতোই অবস্থা। আইনটি নতুন করে হচ্ছে, কিন্তু স্বস্তি ফিরে আসছে না।
যেভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ছিল, অনেকটা হুবহু সেভাবেই এই আইন করা
হচ্ছে। জাতিসংঘ, সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের যেসব আপত্তি ছিল, উদ্বেগের
বিষয় ছিল, সেগুলো রয়ে গেছে। ৯টি ধারা স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশের
স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল
সম্পাদক পরিষদ। এখন প্রস্তাবিত সাইবার আইনে ৭টি ধারায় সাজা ও জামিনের
বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি। তিনি
বলেন, আইনটি ভিন্নমত, সমালোচনা ও মুক্তচিন্তা দমনের সবচেয়ে কার্যকর একটি
হাতিয়ার। গত সাড়ে ৪ বছরে কেবল সরকার কিংবা ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা ও
মুক্তচিন্তা দমনে প্রয়োগ করা হয়েছে। এই আইনে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের
শিকার হয়েছে সাংবাদিক কমিউনিটি। এই আইনের কারণে তাদের মতপ্রকাশের
স্বাধীনতা মারত্মকভাবে সংকুচিত হয়েছে। এই আইন পুলিশকে বাসাবাড়িতে প্রবেশ,
অফিস ও দেহ তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ
সব কিছু জব্দ করার সীমাহীন ক্ষমতা দিয়েছে। অন্য কোনো আইনে পুলিশকে এত
বেশি ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক বলেন,
সাংবাদিকরা কলম ধরেন দেশের স্বার্থে। তাদের বিষয়ে প্রেস কাউন্সিলকে যুক্ত
করার সুযোগ ছিল। ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
এই আইনের অপপ্রয়োগের আশঙ্কা আছে। জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন,
আইনটিতে কিছু রদবদল করা হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকেরা বলেছেন তারা সন্তুষ্ট
নন। সংবিধানে বাকস্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা
দেওয়া হয়েছে। সংবিধান হলো মূল আইন। বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে কোনো আইন তৈরি
হলে তা হবে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান
বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সবার কাছে বিতর্কিত ছিল। কিছুটা পরিবর্তন
করে সাইবার নিরাপত্তা আইন করা হচ্ছে। এটিও স্বাধীন সাংবদিকতা ও
মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায়
গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এই আইনে সাংবাদিকদের বিষয়ে আলাদা
সুরক্ষা রাখা প্রয়োজন ছিল। প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ
ছিল। মতপ্রকাশ সাংবিধানিক অধিকার। এই আইনে মতপ্রকাশ ও চিন্তার স্বাধীনতায়
বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২৭ শতাংশ
মামলা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাদী ক্ষমতাসীন
দলের নেতাকর্মী। জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, কিছু কারিগরি
বিষয়ে এই আইনের দরকার। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের
ব্যবহার হয়েছে খুব সামান্য। মূল মামলা হয়েছে চেতনা, অনুভূতিতে আঘাত
দেওয়ার অভিযোগে। সংবিধানে চিন্তা, সংবাদপত্রে বাকস্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।
এগুলো থাকা অবস্থায় এই ধরনের আইন সংবিধানবিরোধী। এই আইনে অপরাধের সংজ্ঞা
একই রাখা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে সাজা কমানো হয়েছে। এই আইনে গণমাধ্যমের
সেলফ সেন্সরশিপ বাড়বে। ২৭ ধারায় সাইবার সন্ত্রাসী কার্য সংঘটনের অপরাধ ও
দণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে- যদি কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা,
নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা এবং জনগণ বা এর কোনো অংশের মধ্যে
ভয়ভীতি সঞ্চার করার অভিপ্রায়ে কোনো কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক
বা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে বৈধ প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন বা
বে-আইনি প্রবেশ করেন বা করান; কোনো ডিজিটাল ডিভাইসে এইরূপ দূষণ সৃষ্টি
করেন বা ম্যালওয়্যার প্রবেশ করান যাহার ফলে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে বা
গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হন বা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়; জনসাধারণের নিত্য
প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ ও সেবা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসসাধন করেন বা
কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর ওপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করেন;
ইচ্ছেকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক,
ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক, সংরক্ষিত কোনো তথ্য-উপাত্ত বা কম্পিউটার ডাটাবেইজে
প্রবেশ বা অনুপ্রবেশ করেন বা এরূপ কোনো সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত বা
কম্পিউটার ডাটাবেজে প্রবেশ করেন, যা বৈদেশিক কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা জনশৃঙ্খলা পরিপন্থী কোনো কাজে ব্যবহৃত হতে পারে
অথবা বৈদেশিক কোনো রাষ্ট্র বা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সুবিধার্থে
ব্যবহার করা হতে পারে, তাহলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে সাইবার
সন্ত্রাস অপরাধ। যদি কোনো ব্যক্তি এই অপরাধ সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনধিক
১৪ বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত
হবেন। পরিশেষে আমি সকল সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এ সাইবার নিরাপত্তা আইনের
আটটি ধারা বাতিল ও চারটি ধারা সংশোধনের দাবি জানাই। সুতরাং সাইবার আইনে
গণমাধ্যমের জন্য এমন একটি সুরক্ষা বলয় থাকতে হবে, যাতে অপরাধ ও দুর্নীতির
সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার করতে গিয়ে সাংবাদিকদের ভয়ের মধ্যে থাকতে না হয়।
অর্থাৎ এই আইনে সাংবাদিক বা সংবাদকর্মীর পেশাগত কাজ যাতে বাধাগ্রস্ত না
হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কেননা গণমাধ্যম যদি সারাক্ষণ ভয়ের মধ্যে
থাকে, আইনি জটিলতায় তটস্থ থাকে এবং যেকোনো সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের আগেই
একধরনের স্বনিয়ন্ত্রণ (সেলফ সেন্সরশিপ) আরোপ করে, তাহলে সেই দেশে
গণমাধ্যম বিকশিত হয় না। বরং গণমাধ্যম চাপে থাকলে তাতে আখেরে রাষ্ট্রই
ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
লেখক ও গবেষক
|